শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Yakub Ali

Call

হিজড়া (Trans gender) এমন ধরনের মানুষ যাদের যৌনাঙ্গ ছেলেদের মত কিন্তু চেহারা, কন্ঠ ও মানসিকতা মেয়েদের মত অথবা যৌনাঙ্গ মেয়েদের মত কিন্তু চেহারা, কন্ঠ ও মানসিকতা ছেলেদের মত। 

হিজড়ারা কেন, কিভাবে জন্ম নেয় এ নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতপার্থক্য আছে। তবে খুব সম্ভবত, বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ কোন গোলযোগের কারণে যদি কোন বালক বা বালিকার বয়সন্ধির সময় ভিন্ন লিঙ্গের যৌন হরমন নিঃসৃত বা সক্রিয় হয় তাহলে সে হিজড়া হয়ে যায়।

পবিত্র কুরআন অনুযায়ী, আল্লাহ মানুষসহ সকল জীবে নারী-পুরুষ সৃষ্টি করেছেন। 

[সুরা হুদ, ১১:৪০; সুরা রা’দ, ১৩:৩; সুরা ইয়াসীন, ৩৬:৩৬; সুরা নাজম, ৫৩:৪৫; সুরা নাবা, ৭৮:৮; সুরা লাইল, ৯২:৩]

সুতরাং হিজড়ারা বিশেষ কোন সৃষ্টি না। এরা আসলে যৌন প্রতিবন্ধী।

মুকান্নাথ(হিজড়া) সম্পর্কিত দুটি হাদীস পাওয়া যায়।

আবু দাউদ শরীফের ৪১০৭ নং হাদীসে বলা হয়েছে, 

# এক হিজড়া রাসুলুল্লাহ (সঃ)এর স্ত্রীদের ঘরে অবাধে প্রবেশ করত। তাঁদের ধারনা ছিল এরূপ লোকেরা শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়। তাই তাঁরা পর্দার ব্যাপারে তেমন গুরুত্ব দিতেন না। রাসুলুল্লাহ (সঃ) ব্যাপারটা জানতে পারলে এরপর থেকে তাঁর নির্দেশে উনারা পর্দা রাখতে শুরু করেন।

আবু দাউদ শরীফের ৪৯২৮ নং হাদীসে বলা হয়েছে, 

# সাহাবীরা (রাঃ) একদিন হিজড়াকে (যে নামাযও পড়ত) ধরে নিয়ে রাসুল (সঃ) এর নিকটে কারণ সে হাতে পায়ে রঙ মাখাচ্ছিল। রাসুল(সঃ) তাকে মদীনার নিকটবর্তী ‘নাকী’ নামক স্থানে পাঠাতে নির্দেশ দেন।

হিজড়াদের ব্যাপারে ইসলামিক বিধানঃ

# হিজড়ারা ঘৃণা নয় বরং সহানুভূতি পাওয়ার হকদার। কারণ এরা অন্ধ, খোঁড়াদের মত এক ধরনের প্রতিবন্ধি। 

# সম্ভব হলে চিকিৎসা দিয়ে এদের সুস্থ করতে হবে। এক্ষেত্রে মানসিক চিকিৎসা ও হরমোন চিকিৎসা খুবই কার্যকর। 

# হিজড়ারা যৌন নিষ্ক্রিয় নয়। তাই এদেরকে এবং এদের সাথে যারা মিশবে তাদের পর্দা করতে হবে। 

# হিজড়াদের শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্টের খুব বেশি পার্থক্য না থাকলে তারা সবার সাথে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারবে। 

# হিজড়াদের শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্টের খুব বেশি পার্থক্য থাকলে তাদের বিশেষ কোন স্থানে নির্বাসনে দিতে হবে। কারণ, এদের কারনে সুস্থ মানুষের সমস্যা হতে পারে। 

# বিপরীত বৈশিষ্টের হিজড়াদের মধ্যে বিয়ে দেয়া যাবে তবে সুস্থদের সাথে নয়। কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ভাল মেয়ের সাথে ভাল ছেলের, খারাপ মেয়ের সাথে খারাপ ছেলের বিয়ে দিতে হবে ... [সুরা নুর, ২৪:২৬]

হিজড়া সম্প্রদায় আল্লাহ তাআলারই বান্দা বা বান্দি। তারা আল্লাহ তাআলারই সৃষ্টি। তারাও আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব।তাদের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। তারাও মানুষ। আমাদের মতই মানুষ। তবে যেমন অনেক মানুষের শারিরিক ত্রুটি থাকে। এটিও তাদের তেমনি একটি ত্রুটি। এ ত্রুটির কারণে উক্ত ব্যক্তি মনুষত্ব থেকে বেরিয়ে যায় না। বরং অন্যান্য প্রতিবন্ধিদের মতই তারা আরো বেশি স্নেহ, মমতা ও ভালবাসা পাবার অধিকার রাখে। তাদের ঘৃণা নয় ভালবাসা ও স্নেহ দিয়ে সম্মানের সাথে বাঁচতে দেয়া উচিত। তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা, খারাপ মন্তব্য করা মারাত্মক গোনাহের কাজ। যেকোন মুসলমানকে গালি দেয়া যেমন পাপ তাদের গালি দেয়া তার চেয়ে বেশি পাপ। কোন মুসলমানকে তাচ্ছিল্য করা যেমন পাপ তাদেরকে তাচ্ছিল্য করা এর চেয়ে কম পাপ নয় বরং আরো বেশি পাপ। কারণ তাদের এ দুর্বলতার কারণে তাদের ঠাট্টা করা মানে হল আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিকে ঠাট্টা করা। আল্লাহর সৃষ্টিকে হাসি তামাশার বিষয় বানানো। তাই এটি খুবই গর্হিত গোনাহের কাজ।মৌলিকভাবে ইসলামে পুরুষ ও নারীকেই গণ্য করে থাকে। আর যারা উভলিঙ্গ হয়ে থাকেন তারাও মূলত হয় নারী হোন বা পুরুষ হয়ে থাকেন। তাই তাদেরব্যাপারে আলাদা কোন বিধান আরোপ করা হয়নি। যে উভলিঙ্গের অধিকারী ব্যক্তির মাঝে যেটি বেশি থাকবে, তিনি সেই প্রজাতির অন্তর্ভূক্ত হবেন। তাই তাদের ব্যাপারে আলাদা কোন বিধান আরোপ হবার প্রয়োজনই।রাসূল সাঃ এ ব্যাপারে বলেন,أن عليا رضي الله عنه : سئل عن المولود لا يدري أرجل أم امرأة فقال علي رضي الله عنه يورث من حيث يبولহযরত আলী রাঃ রাসূল সাঃ কে প্রসূত বাচ্চা যে পুরুষ নারী তা জানা যায় না তার বিধান কি? জিজ্ঞাসা করলেন। রাসূল সাঃ জবাব দিলেন যে, সেমিরাস পাবে যেভাবে প্রস্রাব করে। {সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১২৯৪, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৩০৪০৩, মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১৯২০৪}হিজড়াদের ক্ষেত্রে বিধান হল তাদের নারী বা পুরুষের যে কোন একটি ক্যাটাগরিতে ফেলতে হবে। রাসূল সাঃ এ ব্যাপারে একটি মূলনীতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সেটা হল, দেখতে হবে হিজড়ার প্রস্রাব করার অঙ্গটি কেমন? সে কি পুরুষদের গোপনাঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে? না নারীদের মত গোপনাঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে? গোপনাঙ্গ যাদের মত হবেহুকুম তাদের মতই হবে। অর্থাৎ গোপনাঙ্গ যদি পুরুষালী হয়, তাহলে পুরুষ। যদি নারীর মত হয়, তাহলে নারী। আর যদি কোনটিই বুঝা না যায়। তাহলে তাকে নারী হিসেবে গণ্য করা হবে। সেই হিসেবেই তাদের উপর শরয়ী বিধান আরোপিত হবে।

সংগৃহীত********************,

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ