অনেক বেশি মন খারাপ থাকলে তা স্বাভাবিক কাজকর্মের উপর খারাপ প্রভাব পড়তে থাকে। কাজে ঠিকমতো মন বসে না, এবং দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রেই ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। আবার এই আবেগটি যখন কাজ করতে থাকে তখন যে সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয় তাও পরবর্তী জীবনের জন্য খারাপ হয়। কিন্তু মন খারাপ যে কোনো কারণেই হতে পারে। এর উপর আমাদের সত্যিকার অর্থেই কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে মন খারাপ ভালো করার উপর আমাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে অনেকাংশে। তাই চলুন দ্রুত মন ভালো করে ফেলার কিছু উপায় জেনে নেয়া যাক ঝটপট।
আপন কোনো মানুষের সাথে কথা বলুন
যে বিষয়টি নিয়ে বেশি মন খারাপ লাগছে সে বিষয়টি নিয়ে যতো কথা বলবেন ততো আপনার মন ভালো হবে। কারণ কারো সাথে দুঃখটা ভাগ করে নিলে তা অর্ধেক হয়ে যায়। তাই মন ভালো করতে চাইলে আপন কারো কাছে বিষয়টি নিয়ে কথা বলুন।
বাইরে কথাও ঘুরতে চলে যান
মন ভালো করার আরেকটি ভালো উপায় হচ্ছে এক জায়গায় বসে না থেকে ঘুরে আসা। বাসায় বসে থাকা কিংবা অন্য কোনো স্থানে বসে থাকলে মন ভালো হবে না মোটেই। বেড়িয়ে পড়ুন। ঘোরাঘুরি এবং হাঁটাহাঁটির মধ্যমে ও প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার মাধ্যমেও মন খুব দ্রুত ভালো হয়ে যায়।
নিজেকে উপহার দিন মজার কিছু খাবার
নিজের পছন্দের মজার কোনো খাবার খেয়ে নিন। বিশেষ করে চকলেট ধরণের কিছু খাবার। এতে করে ভালোলাগা আপনাআপনি উৎপন্ন হবে। কারণ পছন্দের কিছু করলে এবং খেলে মস্তিষ্কে ‘সেরেটেনিন’ নামক ভালোলাগার হরমোন উৎপন্ন হয়।
বড় করে শ্বাস নিন
যখন অনেক বেশি মন খারাপ হবে তখন তা আমাদের মস্তিষ্কে চাপ ফেলবে এবং মানসিক অশান্তি ও চাপ বাড়তে থাকবে। এই জিনিসটি দূর না করতে পারলে মন ভালো হবে না। তাই বড় করে শ্বাস নিন ও ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এতে মস্তিষ্ক রিলাক্স হবে ও মানসিক চাপ কমতে থাকবে। সেই সাথে কমবে মন খারাপের মাত্রাও।
মন খারাপের বিষয়টি মাথা থেকে সরিয়ে রাখুন
নিজেকে অন্য কাজে ব্যস্ত রেখে হলেও মন খারাপের বিষয়টি ভুলে থাকার চেষ্টা করুন। কারণ বিষয়টি যতোটা সময় আপনার মাথায় থাকবে ততোই তা আপনার কষ্ট বাড়াবে। সৃজনশীল কোনো কাজে মন দিন, নিজের যা পছন্দ হয় করতে থাকুন। এতে করে মন থেকে দূর হয়ে যাবে মন খারাপের বিষয়টি।
চিৎকার করে নিন
সাইকোলজিস্টদের মতে আমরা যখন চিৎকার করি তখন আমাদের মস্তিষ্কে যে হরমোনের সৃষ্টি হয় তা মন খারাপের বিষয়টি দূর করে দেয়। তাই অনেক বেশি মন খারাপ লাগলে চিৎকার করুন একলা বসে, আপন মনেই। অথবা লুকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদবেন না। চিৎকার করেই কেঁদে নিন খানিকক্ষণ।
নিজের জন্য কিছু করুন
অনেক সময় আমাদের মন খারাপ হয় যখন আমরা অনেক কিছু আশা করে থাকি এবং তা ভেঙে যায়। এটি আমাদের মানসিকতার উপর অনেক বেশি প্রভাব ফেলে থাকে। তাই সাইকোলজিস্টগন বলেন, এইধরনের মন খারাপ দূর করতে চাইলে নিজের মনের শান্তির জন্য কিছু করা উচিত। এতে করে নিজ থেকেই মন খারাপ দূর হয়ে যাবে।
পানি পান করুন
অনেক সময় ডিহাইড্রেশনের জন্য আমাদের মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং মন খারাপটি আরও বেশি করে আমাদের সামনে চলে আসে। তাই মন খারাপ দূর করতে পানি পান করে নিন এক নিঃশ্বাসে ১ গ্লাস। পানি পানের ফলে অনেকটা হালকা হয়ে যাবে মন।
একবার কোথায় জানি একটা কথা শুনেছিলাম...
মন খারাপ হলো গরম বাতাসের মতো। একটি ঘরে গরম বাতাস থাকলে যেমন জানালা খুলে বাতাস বের করে দিতে হয়ে, তেমনি মন খারাপ হলে কারো সাথে শেয়ার করলে মন খারাপ হালকা হয়ে যায়।
আপনি আপনার খুব কাছের কারো সাথে কথা বলতে পারেন। মন খারাপের কারন জানা থাকলে তার সাথে শেয়ার করতে পারেন। আমার মতে রবীন্দ্র সংগীত বা মন খারাপ করা গান শুনলে মন আরো খারাপ হবে। সিনেমা দেখার অভ্যাস থাকলে নিজের প্রিয় কোন সিনেমা দেখতে পারেন।
আর একটা কাজ করতে পারেন। (মুসলিম হলে) ভাল করে ওজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে পারেন।
মন ভালো রাখার জন্য যা যা করতে পারেনঃ - প্রথমত আপনার মন খারাপের কারণটি খুঁজে বের করুন এবং তা সমাধানের চেষ্টা করুন। - নিজেকে ভালোবাসুন। - বন্ধুদের সাখে আড্ডা দিন। - গান শুনুন। - নিজেকে নিজেই উপহার দিন। - পছন্দের খাবারগুলো খান। এটা বলার অপেক্ষাই রাখে না যে পছন্দের খাবার পেট ভরে খেলে আপনার মন খারাপ কোথায় পালাবে। - খেলাধূলা করুন। - হাসির কিছু মুভি দেখুন। *** এসব না করে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ুন। দেখবেন মন এমনিতে ভালো থাকবে।
অবসরের সময়গুলোতে পরিবারের সকলকে নিয়ে টিভিতে পছন্দের কোনো অনুষ্ঠান দেখতে পারেন। রাতে ভালো কোনো গল্পের বইও পড়তে পারেন। সিনেমা হলে গিয়ে স্বপরিবারে বা বন্ধুদের নিয়ে দেখে আসতে পারেন ভালো কোনো চলচ্চিত্র। মনে রাখা জরুরী যে দেহের সুস্থতার থেকে মনের সুস্থতা অনেক বেশি জরুরি। তাই মন ভাল রাখতে কিছু উপায়ও অবলম্বন করতে পারেন : ১. ক্ষমাঃ ধরুন আপনার সঙ্গে একজনের খারাপ সম্পর্ক আছে। আপনার মনের মধ্যে তার ছবি কল্পনা করে ও আপনার উচ্চ সত্তা থেকে ভালোবাসার শক্তি নামিয়ে এনে বার বার বলুন, তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। পরবতীতে লোকটির প্রতি একটু হলেও ভালোবাসা জন্মাবে। ২.শান্ত থাকার যোগঃ আমরা বেশির ভাগ সময় আমাদের নিজেদের কামনা-বাসনা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ি। কিন্তু এটা না করে স্থির থাকুন। ৩.স্থির হওয়ার ব্যায়ামঃ একটি চেয়ারে বসুন ও পা দুটিকে মেঝেতে রাখুন। চোখ বন্ধ করুন ও মনে মনে চিন্তা করুন যেন আপনার মেরুদর শেষ প্রান্তে, যোগের ভাষায় যাকে কু-লী বলে, সেখানে একটি বৈদ্যুতিক তার লাগানো রয়েছে। এই বৈদ্যুতিক তার আপনার মাথার ওপরের শান্ত সাগরের মতো পৃথিবীর ঠিক মাঝখান থেকে ঝরনাধারার মতো নেমে এসেছে। এটি আপনার দেহে ঢুকে আপনার দেহের সকল বর্জ্যপদার্থ ও খারাপ কিছু চুষে নিচ্ছে। আপনি নিজেকে খুব হালকা বোধ করছেন। প্রথম প্রথম এটি করতে শান্ত জায়গার প্রয়োজন হবে। পরে, আপনি এটি আয়ত্ত করতে পারলে যে কোনো স্থানে বা জায়গায় করতে পারবেন। ৪. তিন চক্রকে সক্রিয় রাখাঃ বিশুদ্ধ চক্র, অনাহত চক্র ও মণিপুর চক্রের মধ্যে দিব্য আলো, আনন্দ, চেতনা খেলা করতে থাকে। তাই এই চক্রগুলো সক্রিয় রাখা খুব জরুরি। কণ্ঠ, হৃদয় ও প্লীহার ওপরে চাপড়াতে থাকুন। এতে এই চক্রগুলো সক্রিয় হবে। দিনে দু মিনিট করে আপনি এটি করতে থাকুন। ৫. স্নায়ু উত্তেজক ব্যায়ামঃ স্নায়ু উত্তেজিত করতে ও জড়তা দূর করতে আপনি বিভিন্ন যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। ৬. কুকুর অথবা বিড়াল পোষাঃ বেশির ভাগ মানুষ স্বার্থপর হয়ে থাকে। তাই, স্বার্থপর মানুষের সঙ্গ না দিয়ে প্রাণীদের সঙ্গ দেওয়া অনেক ভালো। ৭. গাছ লাগানোঃ প্রকৃতির আপনাকে উদার হতে সাহায্য করবে। ৮. অল্পেই খুশি হয়ে যাওয়ার গুণটা আয়ত্ব করে ফেলেন, প্রাণ খুলে হাসুন। সর্বোপরি হতাশা আর দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে মনে রাখতে হবে আপনি যেমনই হন না কেন আপনার মত পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় কেউ নেই। এখনও অনেক কিছুই বাকি। নিজের মত করে বাঁচুন এবং আনন্দে থাকুন। - ধন্যবাদ। ০