তেজস্ক্রিয় রশ্মি কি ? এটা কিভাবে ক্ষতি করে?দৈনিক কতক্ষণ যাবত মোবাইল বা কম্পিউটার চালালে এই রশ্মি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে? এই রশ্মি থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো উপায় আছে?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ থেকে যেসব রশ্নি নি:সৃত হয় তাকে তেজস্ক্রিয়া রশ্নি বলে। যেমন গামা রশ্নি। এইসব রশ্নি যদি মানব দেহে প্রবেশ করে,তাহলে বিভিন্ন কোষ টিস্যু অসাভাবিক বৃদ্ধি ঘটায়। এর ফলে ক্যান্সার বা টিউমার হতে পারে। রোগ নির্ণেয় আর চিকিৎসা ক্ষেত্রে এর ব্যবহার হয়,খাদ্য দ্রব্য ও কৃষি তে এর ব্যবহার হয়। যখন সাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় তখন এটি ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়ায়। পরিত্রাণ পেতে এর সাভাবিক ব্যবহার এ যথেষ্ট। সুত্র: (নবম-দশম) শ্রেণি রসায়ন বই।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

Call

তেজস্ক্রিয় রশ্মি: ১৮৯৬ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী হেনরী বেকরেল প্রথম আবিষ্কার করেন ইউরেনিয়াম ধাতুর নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্ত-ভাবে অবিরত বিশেষ ছেদন শক্তি সম্পন্ন রশ্মি নির্গত হয়। পরবর্তীতে দেখা গেছে যে, অস্থিত আইসোটোপগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন ধরনের রশ্নি বিকিরণ করে নিজের নিউক্লিয়াসে পরিবর্তন এনে অন্য মৌলের স্থিত আইসোটোপে পরিণত হয়। এই আচরণ বা ধর্মকে তেজস্ক্রিয়তা বলা হয় আর এই ধরনের আইসোটোপগুলোকে বলা হয় তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ। 

ইউরানিয়াম-২৩৬, স্ট্রনসিয়াম-৯০, আয়োডিন-১৩০, প্লোটোনিয়াম-২৩৯ উল্খেখযোগ্য তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ। তেজষ্ক্রিয়তা পরমাণুর নিউক্লিয় ঘটনা, তাই একে বাইরের কোন সাধারণ ভৌত প্রক্রিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। 

কিভাবে ক্ষতি করে: সকল তেজস্ত্রিয় পদার্থের প্রতিক্রিয়া সমান নয়। অতিরিক্ত মাত্রার তেজস্ক্রিয় পদার্থ শরীরে প্রবেশ করলে বা স্পর্শে এলে আমরা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সম্মুক্ষীণ হতে পারি। তেজস্ক্রিয় রশ্মি মানুষের সংস্পর্শে এলে শরীরের জীবিত কোষ ধ্বংস হয় কিংবা কোষের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণের সৃষ্টি হয়। আলফা ও বিটা রশ্মি শরীরের বাহ্যিক অংশে এবং গামা রশ্মি কোষের গঠনের ওপর প্রতিক্রিয়া করে। বিকিরণের পরিমাণ সামান্য হলেও এতে বেশি সময় অবস্থানের ফলে তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আবার বিকিরণের পরিমাণ একটু বেশি হলেও এতে অল্প সময় অবস্থানের ফলে তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নাও হতে পারে। তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে ক্যানসার ও লিকোমিয়া রোগের সম্ভাবনা বেশি। তাছাড়া নবজাতক ও শিশুদের শারীরিক ও মানসিক পঙ্গুত্বের জন্যও তেজস্ক্রিয়তা অনেকাংশে দায়ী। আমাদের মানবদেহে একদিনে বিভিন্ন মাত্রার তেজস্ক্রিয়তা গ্রহণের ফলে অসংখ্য প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এটা যদিও শারীরিক সক্ষমতার উপর ভিন্ন ভিন্ন হয় তবুও সাধারণ সক্ষমতার হিসেবে আনুমানিক ধারনার জন্য নিচের দু'টি তালিকা গ্রহণ করা যেতে পারে। 

সিভার্ট একক হিসেবে একদিনে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা গ্রহণের ফলে যে-সব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে: 
১. মাত্রা 0 – 0.25 Sv (0 - 250 mSv) পর্যন্তঃ সম্পূর্ণ নিরাপদ, কারো কিছু হবে না। 
২. মাত্রা 0.25 – 1 Sv (250 - 1000 mSv) পর্যন্তঃ শারীরিকভাবে যারা দুর্বল তাদের কারো কারো খাবারে অরুচী, বমি বমি ভাব, ক্ষুধা-মন্দা দেখা দেবে। কারো অস্থি-মজ্জায় বা লাসিকা-গ্রন্থিতে বা শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যাথা-ব্যদনা বা বিষন্নতা ও অস্বাভাবিকতা দেখা যেতে পারে। 
৩. মাত্রা 1 – 3 Sv (1000 - 3000 mSv) পর্যন্তঃ খাবারে অরুচী আসবে, বমি বমি ভাব হবে, ক্ষুধা-মন্দা দেখা দেবে, শরীরে গোটা-খোঁচ-পাঁচরা-ঘা সৃষ্টি হবে, অস্থি-মজ্জায় বা লাসিকা-গ্রন্থিতে বা শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যাথা-বেদনা, বিষন্নতা ও অস্বাভাবিকতা অনুভূত হবে। যথাসময়ে চিকিৎসা করলে এগুলো থেকে প্রায় সব-ক্ষেত্রেই সুস্থ হওয়া যায়। 
৪. মাত্রা 3 – 6 Sv (3000 - 6000 mSv) পর্যন্তঃ প্রচুর বমি ও ক্ষুধা-মন্দা হবে। রক্ত-ক্ষরণ, ঘা, ডায়রিয়া, বিভিন্ন প্রকার চর্ম-রোগ ও চামড়ায় পোড়া দাগ দেখা দেবে। সাথে সাথে চিকিৎসা না করা হলে মৃত্যু অনিবার্য। 
৫. মাত্রা 6 – 10 Sv (6000 - 10000 mSv) পর্যন্তঃ উপরের উপসর্গগুলো দেখা দেবার সাথে সাথে স্নায়ু-তন্ত্র বিকল হয়ে পড়বে। কিছু সময়ের মধ্যেই মৃত্যু ঘটার সম্ভাবনা। 
৬. মাত্রা 10 Sv (10000 mSv) হতে অধিকঃ শারীরিক অসাড়তা এবং অবশ্যম্ভাবি মৃত্যু। 

কম্পিউটার থেকে ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় রশ্নি নির্গত হয় না। তবে কম্পিউটারের স্ক্রিনের আলো বেশি হলে তা চোখের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ঘরের আলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্ক্রিনের আলো সেট করা উচিত।

আর মোবাইলের ক্ষেত্রে একটি ব্যাপার বলা যায়, যেসব পুরুষ দিনে চার ঘণ্টা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়। যারা ছয় ঘণ্টা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, তাদের প্রজনন ক্ষমতা স্বাভাবিক পুরুষদের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কমে যায়। যেসব যুবক প্যান্টের পকেটে অথবা কোমরে বেল্টের সঙ্গে মোবাইল ফোন ঝুলিয়ে চলাফেরা করেন, তাদের মধ্যেও প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। গবেষণায় দেখা যায়, মোবাইল ফোন থেকে অনবরত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি রেডিয়েশন বের হয়, যা মানুষের হার্টের জন্য ক্ষতিকর। আর তাই শার্টের বুক পকেটে মোবাইল ফোন রাখা একেবারেই নিরাপদ নয়।

তথ্যসূত্র: 
১. http://www.somewhereinblog.net/blog/Zobair7/29367400
২. http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=46640

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

ইউরেনিয়াম ধাতুর নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবিরত বিশেষ ভেদন শক্তি সম্পন্ন রশ্মি বা বিকিরন নির্গত হয়। এই রশ্মির নাম দেওয়া হয় বেকরেল রশ্মি। রেডিয়ামপোলোনিয়ামথোরিয়ামআ্যক্টিনিয়াম প্রভৃতি ভারী মৌলের নিউক্লিয়াস থেকেও বেকরেল রশ্মির মত একই ধরনের রশ্মি নির্গত হয়, যা এখন তেজষ্ক্রিয় রশ্মি নামে পরিচিত। যে সব মৌল হতে তেজষ্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয় তাদেরকে তেজষ্ক্রিয় মৌল বলে। তেজষ্ক্রিয় রশ্মি নির্গমনের এই ঘটনাকে তেজষ্ক্রিয়তা(Radioactivity) বলে।

সেল ফোন তার-বিহীন (ওয়্যারলেস) হওয়ায় এতে কম মাত্রার রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি থাকে। এই তেজস্ক্রিয় রশ্মি ক্ষতিকর হোক বা না হোক, সমীক্ষায় এটা প্রমাণিত, বেশি মাত্রার রেডিয়েশন কিন্তু টিস্যু আর ডিএনএ-র ক্ষতি করে।

এই রশ্মি থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়ঃ রেডিয়েশন সাধারণত মাথা আর চোখের ক্ষতি করে বেশি। তাই সরাসরি সেল ফোন কানে না ধরে হেড সেট বা স্পিকার ফোনে কথা সারুন। এতে মাথার থেকে ফোনের দূরত্ব বজায় থাকবে। আর কথা বলার সময় কোলের ওপর বা পকেটে না রেখে শরীর থেকে কম করে এক ফুট দূরে সেটটি রাখুন। সবচেয়ে ভালো উপায় ফোনে কথা কমিয়ে মেসেজ পাঠানো। ফোন এলেই দ্রুত কানে তুলবেন না। যিনি ফোন করেছেন আগে তাঁকে কথা বলতে দিন। তাহলে রেডিয়েশনের প্রভাব কম পড়বে। কারণ, ফোন আসার সময় তেজস্ক্রিয় রশ্মির মাত্রা বেশি থাকে। তুলনায় কম থাকে কথা বলার সময়। একই ভাবে, বুক বা হিপ পকেটে ফোন রাখবেন না। এতে সরাসরি শরীরের সঙ্গে সংযোগ থাকায় আভ্যন্তরীণ প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। বদলে হাত-ব্যাগে ফোন রাখুন। না হলে অ্যান্টি-রেডিয়েশন খাপের ভেতর রাখতে পারেন। ঘুমোনোর সময় অবশ্যই ফোন বন্ধ করে দেবেন। এই সময় ফোন বাজলে ফোন থেকে আসা রেডিয়েশন ঘুমন্ত শরীরের পক্ষে বেশি ক্ষতিকর। ফোনে অ্যালার্ম দেওয়া থাকলে মাথা বা কানের কাছে না রেখে বেশ কিছুটা দূরত্বে রাখুন। বালিশের তলায় তো একেবারেই রাখবেন না। 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ