যারা সরকারি চাকরি করতে আগ্রহী তাদের স্বপ্ন বিসিএস। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা অনেকের মনে থাকলেও সঠিক নির্দেশনার অভাবে অভাবে এগুতে পারেন না। অনেকেই হয়তো চাকরি করে কোচিং করতে পারবেন না এই ভেবে আর পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন না। এটা কিন্তু অসম্ভব নয়। কিন্তু কিভাবে? পরিকল্পনা: প্রথমেই বিসিএস সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জোগাড় করে ফেলতে হবে। পরীক্ষার তারিখ, সিলেবাস, পরীক্ষার ধাপ সমূহ,আবেদন এর শেষ তারিখ, আসন সংখ্যা, ইত্যাদি। পড়ার সঙ্গী নির্বাচনঃ গ্রুপ স্টাডি এই পরীক্ষার জন্যে খুবই জরুরি। বিশেষ করে যারা নতুন পরীক্ষার্থী তাদের জন্যে পুরানো পরীক্ষার্থীর সাথে গ্রুপ স্টাডি করতে হবে। একাধিক সঙ্গী হলে ভালো। তবে এমন কাওকেই আপনার পড়ার সঙ্গী বানাতে হবে যে আপনার মতই সিরিয়াস এবং যার সাথে আপনার এক সাথে পড়ালেখা করতে সুবিধা হবে। এতে করে অনেক ছোট খাটো পড়ার কৌশল শিখা যায়। কিভাবে পড়া শুরু করা উচিত, কোন বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে, ইত্যাদি। ভালো সার্কেল এর সাথে পড়ালেখা করলে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে। বই সংগ্রহঃ বাজারে বিসিএস এর জন্যে অনেক বই আছে। এর মধ্যে বেছে নিতে হবে ভালো মানের বই। এই জন্যে সাহায্য নিতে পারেন পূর্বে বিসিএস এ উত্তীর্ণ সিনিয়র কারো কাছ থেকে। এছাড়া ফেইসবুকে অনেক গ্রুপ আছে, যেগুলোতে অনেক তথ্য পাওয়া যায় কোন কোন বই কেনা উচিত, সংগ্রহ করা উচিত। বিষয় অনুযায়ী বই কিনে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে একটি বিষয়ের জন্যে একের অধিক বই সংগ্রহ করা যেতে পারে। পড়ার পরিবেশঃ পড়ার পরিবেশ অনেক ক্ষেত্রে পড়ার মনযোগ তৈরি করা, আগ্রহ তৈরি করার ক্ষত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোথায় পড়বেন সেটা নির্বাচন করে ফেলুন। বাসায় পরিবেশ না থাকলে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় এর লাইব্রেরী অথবা কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর লাইব্রেরী তে চলে যেতে পারেন। অথবা কোন পড়ার সঙ্গীর বাসায় কয়েকজন মিলে পড়ার পরিবেশ তৈরি করে নিতে পারেন। টাইম টেবিলঃ আগেই জেনে নিন ঠিক কত সময় হাতে আছে আপনার এবং প্রতিদিন কত ঘন্টা সময় আপনি পড়বেন। কোন বিষয় এর জন্যে কত ঘন্টা বরাদ্দ করবেন সেটা নির্ভর করবে আপনি কোন বিষয় কতটা পারদর্শী। তবে নিশ্চিত করুন প্রতিদিন যেন সব বিষয় পড়া হয়। সেই হিসেবে ভাগ করে নিন আপনার সময় কে। চাকরিজীবীদের অফিস পরবর্তী সময় এবং ছুটির দিনগু্লোতে সময় নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। কোচিং এর প্রয়োজনীয়তাঃ অনেকেই বলে কোচিং ছাড়া বিসিএস এ চান্স পাওয়া সম্ভব না। আবার অনেকেই বলে কোচিং করলে সময় নষ্ট হয়। আসলে কোচিং এর গুরুত্বটা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করবে। আপনি যদি নিজে নিজে পড়তে না পারেন এবং যথেষ্ট পরিমাণে মনযোগী না হন তাহলে কোচিং এ যাওয়াই উত্তম। কোচিং এর বিকল্প হিসেবে আপনি কোন প্রাক্তন পরীক্ষার্থী থেকে নিয়মিত অথবা সপ্তাহে দুই একদিন গাইড নিয়ে নিতে পারেন। নিয়মিত পড়াশোনা করাটাই আসল উদ্দেশ্য। পূর্ববর্তী বিসিএস এর প্রশ্নঃ পূর্ববর্তী বিসিএস এর প্রশ্ন হুবুহু না আসলেও, সেই প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। এতে আসন্ন বিসিএস এ কি ধরনের প্রশ্ন হতে পারে আপনার ধারণা হয়ে যাবে কমবেশি। প্রশ্নের মান, কোন বিষয়ে আপনার কি ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে এগুলো জানা যাবে। মডেল টেস্টঃ যেকোন পরীক্ষার জন্যেই মডেল টেস্ট এর গুরুত্ব অনেক। মডেল টেস্ট পরীক্ষার জন্যে আপনার প্রস্তুতি কেমন সেটা সম্পর্কে ধারণা দিবে এবং আপনার কোন বিষয়ে আরো কত জোর দিতে হবে সেটাও জানতে পারবেন। নিয়মিত মডেল টেস্ট দিতে হবে। ভালো প্রস্তুতি নেয়ার আগ পর্যন্ত নিজে নিজেই মডেল টেস্ত দিতে পারেন। ভাল প্রস্তুতি নেয়া হলে কোচিং এও দিতে পারেন টেস্ট। ফেইসবুকের মাধ্যমে স্টাডিঃ ফেইসবুক এ বিসিএস র প্রস্তুতির জন্যে আছে অনেক গ্রুপ। কিছু কিছু গ্রুপ পরিচালিত হয় পূর্বে বিসিএস এ উত্তীর্ণ কোন ক্যাডার এর দ্বারা। আপনি সেই গ্রুপগুলোতে নিয়মিত ফলো করলে অনেক আপডেটেড তথ্য পাবেন। কোন প্রশ্নের উত্তর না পারলে নিতে পারেন গ্রুপের সদস্যদের সাহায্য। পরীক্ষার ধরন অনুযায়ী প্রস্তুতিঃ বিসিএস পরীক্ষা কয়েকটি ধাপে হয়। ধাপ অনুসারে প্রস্তুতি নিতে হবে। এক এক ধাপের সিলেবাস ও ব্যাতিক্রম। আশা করি টিপসগুলো কে অনুসরণ করলে আপনার বিসিএস প্রস্তুতি নেয়া সহজ হবে। শুভ কামনা রইল।
bcs ক্যাডার হতে করনীয় আপনি নবম দশম শ্রেণীর ক্লাশের শিক্ষার্থীদের গণিত, বিজ্ঞান বইগুলো পড়ুন। ভালো হয় উক্ত ক্লাশের কোনো শিক্ষার্থীকে পড়ালে। কিছু টাকাও পেলেন আবার বিসিএস প্রস্তুতিটাও হলো। আপনার ছোট ভাই-বোন থাকলে তাদেরও পড়াতে পারেন । প্রাথমিক প্রস্তুতির জন্য বাজারে সাম্প্রতিক তথ্যাবলি নিয়ে সংকলন পাওয়া যায়। যাচাই বাছাই করে একটি ঢাউস সাইজের বই কিনে নিতে পারেন। প্রতিটি অধ্যায়ের ভূমিকাটুকু ভালো করে পড়ে ফেলবেন । প্রয়োজনে রঙিন কলম দিয়ে দাগিয়ে রাখবেন। প্রতিদিন নিয়মিত পত্রিকা পড়বেন। আপনার মাথায় থাকবে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি, বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক আবিষ্কার, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সর্বশেষ তথ্য। কম্পিউটার, ইন্টারনেট, তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য। চমকপ্রদ এবং গুরুত্বপূর্ণ সংবাদগুলো নোটস আকারে খাতায় লিখে রাখতে পারেন। পেপার কাটিং অ্যান্ড ক্লিপিংস করে রাখতে পারেন। তবে পেপার কাটিং রাখার আগে আর্টিকেলগুলো ভালোভাবে পড়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কলম দিয়ে দাগিয়ে রাখবেন। পরীক্ষার আগে পুনরায় চোখ বুলানোর সময় আপনার সেই তথ্যগুলো কাজে লাগবে। বাংলা ইংরেজির ক্ষেত্রে নবম দশম শ্রেণীর গ্রামার বই যেগুলো সে সময়ে ফাঁকি দিয়ে এসেছিলেন, সেগুলো আত্মস্থ করে ফেলুন। বাংলা ইংরেজি রচনা তৈরির প্রচেষ্টা হাতে নিন। ইংরেজি শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করুন এবং পরীক্ষায় তা প্রয়োগ করুন। পাঠ্য বইয়ের বাইরেও দেশী-বিদেশী বিভিন্ন লেখকের উপন্যাস, ঐতিহাসিক উপন্যাস, অনুবাদ, প্রবন্ধ ইত্যাদি পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বাংলা ইংরেজি সাহিত্যের লেখক এবং তাদের উল্লেখযোগ্য লেখা সম্পর্কে জানুন। নবম দশম শ্রেণীর পাটিগণিত-বীজগণিত, জ্যামিতি ভালোভাবে অধ্যয়ন করুন। আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখবেন। বিসিএস পরীক্ষায় এজন প্রার্থীর পড়াশুনা, মেধা, বুদ্ধিমত্তা যাচাইয়ের সবরকম উপায় নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হয়। তাই প্রশ্ন অনেকসময় বুদ্ধিমত্তা যাচাইয়ের জন্যও হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার সর্বোচ্চ বিচার-বুদ্ধির পরিচয় দিন। আপনি যে বিষয় নিয়ে অনার্স বা মাস্টার্স করছেন সে বিষয়টি ভালোভাবে পড়ুন। কারণ এটি আপনার ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে। আপনার বিষয়টি ভালোভাবে জানা থাকলে আপনি লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করবেন। লিখিত পরীক্ষায় আপনার পছন্দমতো ২/৩টি বিষয় নিতে হবে। সবচেয়ে বেশি নাম্বার ওঠে এরকম বিষয়গুলো ভালোভাবে আত্মস্থ করুন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকতে হবে। আপনার টেবিলের সামনে দেয়াল জুড়ে একটা বিশ্ব ম্যাপ এবং বাংলাদেশের ম্যাপ রাখুন। যখন আন্তর্জাতিক কোনো বিষয় পড়বেন বা বাংলাদেশের কোনো তথ্য জানবেন তখন ম্যাপে দেশটির অবস্থানের উপর চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। এতে আপনার বিশ্ব এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো জানা হবে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান মনে রাখার দক্ষতা থাকতে হবে। ধরুন বাংলাদেশে প্রতি বছর কত লক্ষ টন পলিমাটি বন্যার সময় আসে- এই তথ্যটি একটি দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই এধরনের তথ্য মনের মধ্যে গেঁথে রাখুন এবং প্রয়োজনে ছোট্ট নোটবুকে তা টুকে রাখুন। আরেকটি কাজ করবেন। একটি বড় আর্ট পেপার নিবেন। সেই পেপারে বিশ্বের সবগুলো দেশের নাম, প্রেসিডেন্ট- প্রধানমন্ত্রীর নাম, মুদ্রা, স্বাধীনতা কাল, রাজধানী, প্রধান আমদানী-রপ্তানী পণ্য ইত্যাদি লিখে রাখুন। রুল টেনে তথ্যগুলো লিপিবদ্ধ করার ছলে একটি চার্ট তৈরি করে ফেলুন । লিখতে গেলেই আপনার যে পড়াটা হয়ে যাবে তা এক নিমিষে আপনার চোখে ফুটে উঠবে পরীক্ষার সময়। দেশগুলো সম্পর্কে আপনি ফুটনোটস ও রাখতে পারেন সেই চার্টে। মনে রাখবেন আপনি যতবেশি তথ্য ধারণ করতে পারবেন ততবেশি আপনার সম্ভাবনা থাকবে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার। আপনি পড়াশুনা বা পার্টটাইম জব করেন। এর ফাঁকেও আপনার প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কোনো টাইম ফ্রেম রাখার প্রয়োজন নেই। তবে আজকাল কোচিং সেন্টারগুলো শিক্ষার্থীকে টাইম ফ্রেমে রেখে শিক্ষাদান করে। এটা অনেকের জন্য ভালোও হতে পারে। তবে নিজে নিজে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াটাই সর্বোত্তম। কোচিং সেন্টার গুলে খাওয়ালেও নিজস্ব সৃজনশীলতা না থাকলে এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াটা শক্ত হবে। তাই নিজেকেই সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে। বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক পর্বে রচনা আসে। আপনি চেষ্টা করবেন ব্যতিক্রমী রচনাটি লিখতে। রচনাটি লিখতে আপনি যত তথ্যসমৃদ্ধ করতে পারবেন ততই রচনাটির উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং পরীক্ষকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবে। বিগত কয়েক বছরের প্রশ্নগুলো নিয়ে স্টাডি করুন এবং দেখুন প্রশ্নের ধাঁচ কিরূপ ছিল। রচনাগুলোও দেখুন। পরিশেষে আরেকটি পরামর্শ। টোফেল, জিম্যাট, জিআরই, স্যাট ইত্যাদির যে কোনো একটি বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকুন। নেটে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে খোঁজ নিতে থাকুন। আপনার অজানা বিষয়টা গুগলে সার্চ দিয়ে জেনে নিতে পারেন। দুনিয়ার সর্বশেষ তথ্যের সাথে আপডেটেড থাকুন। একজন তথ্যসমৃদ্ধ ব্যক্তি একজন দক্ষ অফিসার। বিসিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই তথ্যটুকু অন্তরে লালন করুন।