শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

ইসলামের ইতিহাসে ওহাবী আন্দোলন, শির্ক বিদ'আতের বিরুদ্ধে এক আপোষহীন আন্দোলনের নাম। কিন্তু উপমহাদেশের শির্ক- বিদ'আতের পক্ষপাতদুষ্ট একশ্রেণীর লোক এ মহান আন্দোলনকে হেয় করার মানসে এর বিরুদ্ধে বিষোদগার করে চলছে..! সৌদিআরব যেহেতু শির্ক-বিদ'আতের বিরুদ্ধে সব সময় আপোষহীন, তাই তাদেরকেও ওহাবী বলে গালি দেওয়া হয়। চলুন এবার ওহাবী আন্দোলনের গোড়ার ইতিহাস জেনে নিই... আটার শতকের গোড়ার দিকে ভারতবর্ষ, তুরস্ক ও পারস্যে মুসলমানদের মধ্যে ইসলামের নামে ব্যাপক মাজার-দরগাহ্ ও পীর পূজার প্রচলন শুরু হয়। সে সময়ে এক শ্রেণির সুবিধাভোগী আলেম পার্থিব স্বার্থে কোরান হাদীসের বিকৃত ব্যাখ্যা প্রদান করে ইসলামের বিপরীত প্রথা প্রচলন করেন। সেময়ে মুসলমানরা কবরে বাতি জ্বালিয়ে ফুল দিয়ে সজ্জিত করত। মাজারে মানত করতো, মৃত পীর পয়গম্বরদের কাছে সাহার্য পার্থনা করতো। এমনকি হজ্বে এসে মুসলমানরা মক্কা-মদীনার পবিত্র স্থানে শির্ক-বিদা’তে মগ্ন থাকতো। তুর্কি মুসলিমরা হজ্ব যাত্রাকালে সবচেয়ে অসচ্চরিত্রা রমণীদেরকে সংগে নিয়ে আসতো। তাছাড়াও তারা জঘন্যতম পাপাচারে লিপ্ত থাকতো। তারা প্রকাশ্যে মদ্য পান করতো ও আফিম খেত। মুসলমানদের এমন অধঃপতন দেখে মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব (রাহঃ) শির্ক বিদা’তের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন। দি ইন্ডিয়ান মুসলমান্স গ্রন্থের লেখক উইলিয়াম হান্টার ওহাবী মতবাদ সম্পর্কে এভাবেই লেখেন-“ তরুন আব্দুল ওহাব হজ করতে এসে সহযাত্রীদের লজ্জাকর লাম্পট্য ও হরেক রকম ভাঁড়ামি শহরটিকে কলুষিত করে ফেলেছে দেখে তিনি (মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব) অত্যান্ত ব্যথিত হন। প্রায় তিন বছর ধরে তিনি দামিশ্কবাসী মুসলমানদের দূনীতি ও দুশ্চরিত্র সম্বন্ধে গভীর চিন্তা করেন এবং শেষে এ- সবের প্রকাশ্যে নিন্দা করতে আরম্ভ করেন। তিনি প্রকাশ্যে তুর্কী আমেদের এ বলে নিন্দা করতে থাকে যে, তারা নিজেদের আচার অনুষ্ঠানের দ্বারা আল্লাহ্র লিখিত বাণীকে অকেজো করে ফেলেছেন এবং অবর্ণনীয় পাপাচারের ফলেই তুর্কী জাতটা আজ কাফেরদের ও চেয়েও ঘৃন্য হয়ে উঠেছে। তার এইসব উক্তি দ্বারা তিনি নিজেকে তরস্কের শাহী দরবারে বিষেশভাবে ঘৃণার পাত্র করে ফেলন এজন্য শহরে থেকে শহরে বিতাড়িত হয়ে অবশে তিনি দারিয়ার শাসক মোহাম্মদ ইবনে সাউদের নিকট আশ্রয় লাভ করেন। —-তার সাহায্যে একটা ক্ষুদ্র আরব জোট গঠিত করে তুর্কী সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নিশান উড়ালেন।” মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব মুসলিম সমাজ থেকে বিকৃত ইসলামকে বিতাড়িত করতে একদল মর্দ্দে মুজাহিদ তৈরী করেন এবং তাদেরকে সাথে নিয়ে ইসলাম বিবর্জিত বাদশাহদের হঠিয়ে খেলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনেন। এরপর মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব সুসজ্জিত মাজার ভেঙ্গে মাজার পূজা বন্ধ করেন। দুঃচরিত্রা নারী নিয়ে হজ্বে আসা নিষিদ্ধ করেন। মক্কা মদিনার পবিত্র স্থান সমূহ প্রচলিত শির্ক- বেদা’তের মুলোৎপাটন করেন। তার আমলে বিজিত প্রদেশগুলোতে তিনি ইসলামী রীতি নীতি প্রর্বতন করেন। মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাবের মৃত্যুর পরে তার অনুসারীরা ক্ষমতা হারাবার পূর্ব পর্যন্ত প্রদেশগুলোতে ইসলামী রীতি নীতি প্রচলন রাখেন। যুগে যুগে যখনই কোন শ্রেণি বা গোষ্ঠি মানুষকে প্রকৃত ইসলামের দিকে আহ্বান করে সংঘবদ্ধ প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছে, তখনই তাদের ওপর তৎকালীন শাসক শ্রেণির নির্যাতন নেমে এসেছে। সে সময় কায়েমী স্বার্থ সিদ্ধির লক্ষে মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে এক শ্রেণির আলেম ও প্রগতিশীল মুসলিম বুদ্ধিজীবি সরকারের পক্ষ নেয়। এই শ্রেণি ইসলামের প্রকৃত অনুসারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফতোয়া জারি করে এবং তাদের আন্দোলনকে স্তিমিত করতে নানা রকমের গালি দেয়। “ওহাবী মতবাদ” ইসলাম পন্থীদের প্রতি ইসলাম বিদ্বেষীদের তেমন-ই একটি গালি।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্র জন্য। যারা শির্ক-বেদাত বিরোধী ও ইমাম মুহাম্মাদ ইব্ন আব্দুল ওহ্হাবকে মানে তাদেরকে ইহুদীরা ওহাবী নাম দেয়। ওয়হাবীরা আল্লাহ্র তৌহীদ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সকল বাধাকে অতিক্রাম করে থাকে। তারা সর্বদা জিহাদের জন্য প্রস্তুত। মূলত ওহাবীরা সৌদিতে বাস করে এবং অন্যান্য দেশেও বাস করে। ইমাম মুহাম্মাদ ইব্ন আব্দুল ওহ্হাব – তার জীবনী এবং ধর্ম প্রচার বর্ণনায় – শাইখ আব্দুল আযিজ ইব্ন আব্দুল্লাহ ইব্ন বায (রহ:) ইমাম মুহাম্মাদ ইব্ন আব্দুল ওহ্হাব একজন অসাধারন মানুষ, বিশিষ্ট সংশোধক এবং উদ্দিপনাময় ধর্ম প্রচারক ছিলেন, যার আবির্ভাব হয় আরবে ১২০০ হিজরিতে। তার পিতা তাকে নিজ গ্রাম থেকেই শিক্ষা দেয়, ওয়াইনা, একটি গ্রাম যা ইয়ামামার নায্দ এর মধ্যে অবস্থিত, রিয়াদ শহর থেকে উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। তিনি অল্প বয়সে কুরআন পড়া শিখেন এবং পড়াশুনায় এগিয়ে যায়, পিতার হাত দ্বারাই উচ্চ শিক্ষা লাভ করে, শেইখ আব্দুল ওহ্হাব ইব্ন সুলাইমান, যিনি বিশিষ্ট আইন বিজ্ঞ এবং ওয়াইনার বিচারক ছিলেন। সাবালক হলে শেইখ শিক্ষার জন্য মক্কার উদ্দেশ্যে ভ্রমন করেন এবং তার পর মদিনাতে যান এবং মদিনার আলেম থেকে শিক্ষা গ্রহন করেন। তারপর তিনি ইরাকে (বাসরা) যান শিক্ষা গ্রহন করতে। ইরাকই হল সেই স্থান যেখান থেকে তিনি প্রথম ধর্ম প্রচার শুরু করেন। সেখানকার লোকদেরকে তিনি এক আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস এবং নবী (সা:) এর সুন্নতের দিকে আহব্বান করেন। তিনি বর্ণনা করেন যে প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য তার ধর্মকে (ইসলাম) শক্ত ভাবে মানা কুরআন এবং হাদীস অনুসারে। তিনি বিতর্কে এবং আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন বিভিন্ন ইমামের সাথে এবং এর মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেন। যদিও কিছু ভণ্ড ইমাম তাকে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং তিনি কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হন এবং কষ্টও পান। তাই তিনি বাসরাহ থেকে আয- যুবাইর চলে যান, তারপর আল- আহসা এবং অবশেষে হুরাইমেলা, সেখানেও তিনি ক্ষতির সম্মুখীন হন খারাপ লোকদের দ্বারা কারন তিনি ভালকে গ্রহন করেছেন এবং খারাপকে নিষেধ করেছেন এবং শাসন কর্তাদের উপদেশ দিতেন অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দিতে। তাই কিছু লোক তাকে মারার চেষ্টা করে কিন্তু আল্লাহ্ তাকে বাঁচিয়েছেন। তারপর তিনি ওয়াইনা চলে আসেন, যা রাজা উথমান ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন মুয়া’মারের অধীনে ছিল, রাজা শেইখকে স্বাগতম জানালেন এবং ইসলামের জন্য সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করার অঙ্গিকার করলেন। নাযদ এর মুসলমান মানুষদের এমন অবস্থা ছিল যে কোন মুমিন বেক্তি তা সমর্থন করবে না। বস্তু পূজা শুরু হয়েছিল ব্যাপক ভাবে, মানুষেরা কবর পূজা শুরু করেছিল, গাছ পূজা, পাথর পূজা, গুহায় পূজা অথবা পীরদের পূজা করত। জাদু এবং গণকদেরও অনেক বিস্তার লাভ করেছিল। যখন শেইখ দেখলেন যে মানুষদের মাঝে পুজাতন্ত্র ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে এবং কেউ এগুলোকে নিষেধ করছিল না, কেউ মানুষকে আল্লাহ্র পথে ডাকছিলও না, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন একার শ্রম দেওয়ার জন্য ধৈযের সাথে। তিনি জানতেন কোন কিছুই করা সম্ভব নয়, জিহাদ, ধৈয এবং কষ্ট ছারা। শেইখ মানুষকে আল্লাহ্র পথে ডাকার কাজ করে গেলেন এবং তাদেরকে পথ দেখালেন আল্লাহ্র জন্য ধার্মিক হওয়ার, নীতিবান হওয়ার এবং ভালবাসার। ক্রমান্বয়ে শেইখ খ্যাতি লাভ করা শুরু করলেন ওয়াইনাতে। প্রতিবেশী অঞ্চল এবং গ্রাম থেকে মানুষ তার সাথে সাক্ষাৎ কারার জন্য ওয়াইনা আসতো। তিনিও অনেক আলেমের কাছে চিঠি লিখতেন তাদের সাহায্য চেয়ে এবং তাদের স্মরণ করিয়ে দিতেন আল্লাহ্র দ্বীনের জন্য পুজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার। নাযদ, মক্কাহ্ এবং মদিনা থেকে অনেক আলেম তার আহ্বানে সারা দিয়েছিলেন আবার অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেছিলেন, নিন্দা করেছে তার কাজকে, দোষারোপ করেছে এবং তার থেকে দুরে থেকেছে। শেইখ এবং তার অনুসারীরা দুই ধরনের মানুষের মধ্যে ছিলেন, এক দল ছিল অজ্ঞ, যারা ইসলাম সম্পর্কে কিছুই জানত না এবং যারা ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তাদের অনুস্মরণ করেছে, বেদআত দলকে অনুস্মরণ করেছে, কুসংস্কারের দলকে অনুস্মরণ করেছে ইত্যাদি। যা তাদের পূর্ব পুরুষেরা করে আসছিল। কুরআন তাদের ক্ষেত্রে বলেছে: “বরং তারা বলে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক পথের পথিক এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করে পথপ্রাপ্ত।”…[সূরা আয-যুখ’রুফ, আয়াত-২২] অন্য দিকে দ্বিতীয় দলের জ্ঞান ছিল কিন্তু শেইখের সাথে বিরোধিতা করেছে হিংসার কারণে, লজ্জিত হওয়ার কারণে, ভয় পাওয়ার কারণে যে তাদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, “কেন তারা এতো দিন চুপ ছিল এই- এই পথভ্রষ্টতার ব্যাপারে আব্দুল ওহ্হাব না আসা পর্যন্ত”? কিন্তু শেইখ ধৈর্যের সাথে সব ক্ষেত্রে আল্লাহকে মেনে চলতেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ