বাত জর হলে করণীয় কি?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

বাতজ্বর হলে করণীয়: ১। বৃষ্টির পানিতে ভিজা যাবে না। ২। ঠান্ডা পানীয় পান করা যাবে না। যেমন-ঠান্ডা পানি, ঠান্ডা দধি, ঠান্ডা সেভেন আপ। ৩। ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার খাওয়া যাবে না। ৪। অতিরিক্ত ঠান্ডা বাতাস থেকে দূরে থাকতে হবে। ৫। খালি গায়ে থাকা বা হালকা কাপড় পরিধান করা যাবে না। ৬। খারাপ আবহাওয়ার মধ‍্যে বাইরে বের হওয়া যাবে না। ৭। প্রচন্ড ঝড় বা ঝিরঝিরি বৃষ্টি থেকে দূরে থাকতে হবে। ৮। বিশ্রামের প্রয়োজন বেশি। দৈনিক কমপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। ৯। হালকা জ্বর বা হালকা শরীর ব‍্যথা নিয়ন্ত্রণের জন‍্য শুধু নাপা (১ পাতা = ১০ টাকা) খাবেন। ১০। খাবারে অনিয়ম করা যাবে না। সময়মত খেতে হবে। ১১। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে থাকা যাবে না। ১২। আলো-বাতাস আসে এমন ঘরে থাকুন। ১৩। নিয়মিত ৩-৪ টি কাঁচা তুলসীপাতা চিবিয়ে খান। ১৪। চিরতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে, এর তিতা পানি পান করুন। ১৫। কালোজিরা খান। এতে সকল রোগের ঔষধ রয়েছে। সর্বোপরি একজন বাতজ্বর বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে দীর্ঘমেয়াদি ২-১০ বৎসর চিকিৎসার মাধ‍্যমে এর থেকে আরোগ‍্য লাভ করতে পারেন। বাতজ্বরের চিকিৎসা সবচেয়ে সস্তা। বাতজ্বরের চিকিৎসা না করলে একটা সময় বাল্ব নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই এই জ্বরকে গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত। বছরের বারো মাস হালকা জ্বর থাকা, শরীরের কোনো একটি অংশ যেমন, হাত বা পা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে হালকা বা বেশি কাঁপতে থাকা, ঠান্ডা বাতাসে জ্বর চলে আসা, ঠান্ডা পানি বা ঠান্ডা খাবার খেলে জ্বর চলে আসা, হালকা বৃষ্টি বা বেশি বৃষ্টিতে ভিজলেই জ্বর চলে আসা, ঠান্ডা সহ‍্য করতে না পারা বা ঠান্ডা অপছন্দ করা ইত‍্যাদি বাতজ্বরের লক্ষণ। আপনার সুস্থ জীবন কামনা করছি। ধন‍্যবাদ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

বাতজ্বর হলে ঘরোয়া চিকিৎসার কথা চিন্তা না করে অতি দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। এতে বেশি বিলম্ব করলে মস্তিষ্কে এর সংক্রমণ হতে পারে।  তবে জ্বরসহ জয়েন্টে ব্যথা হলেই বাতজ্বর মনে করে আতঙ্কিত হবেন না। প্রথমে উপসর্গ লক্ষ্য করলে আগে ডাক্তারের কাছ থেকে আসলেই বাতজ্বর হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হন। তারপরে চিকিৎসার দিকে পা বাড়ান।  বাতজ্বরে আক্রান্তকে সবসময় বিশ্রামে রাখুন এবং বেশি নড়তে মানা করুন। আক্রান্ত জয়েন্ট বেশি নড়ানড়ি হলে আরো ক্ষতি হতে পারে। 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

সাধারণত মনে করা হয় গিরায় গিরায় কিংবা হাড়ে হাড়ে ব্যথা হলে সেটা বাতজ্বরের লক্ষণ। তবে সবক্ষেত্রেই তা সঠিক নয়। ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র রায় বলেন, রোগীর অতীত ইতিহাস, উপসর্গ এবং অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ নিশ্চিত করতে হয়। বাতজ্বরের কিছু মুখ্য ও কিছু গৌণ লক্ষণ রয়েছে। দুটি কিংবা একটি মুখ্য লক্ষণের সঙ্গে দুটি গৌণ লক্ষণ নিশ্চিতভাবে মিলে গেলে বাতজ্বর নির্ণয় করা যায়। তার সঙ্গে বিটা হিমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাসজনিত সংক্রমণের ইতিহাস বা প্রমাণও থাকতে হবে।

মুখ্য লক্ষণ

* হৃৎপিণ্ডে প্রদাহ। যার ফলে জ্বর, বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, নাড়ির গতি বেড়ে যাওয়া এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

* গিরায় ব্যথা হয়। সাধারণত শরীরের বড় বড় সন্ধিতে ব্যথা হয়। একটি সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাওয়ার পর অন্যটি আক্রান্ত হয়।

* বুকে ও পিঠে লাল বর্ণের চাকা।

* হাত-পা বা শরীরের কোনো অংশের নিয়ন্ত্রণহীন কাঁপুনি।

* ত্বকের নিচে শিমের বিচির মতো ছোট আকৃতির শক্ত ও ব্যথাযুক্ত দানা।

গৌণ লক্ষণ

* স্বল্পমাত্রার জ্বর।

* গিরায় গিরায় ব্যথা।

* রক্তের ইএসআর বেড়ে যাওয়া।

* এএসও টাইটার বৃদ্ধি।

নানা ভ্রান্তি ও অসচেতনতা থেকে সাবধান

রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা নিয়ে রয়েছে নানা ভ্রান্তি ও অসচেতনতা। যেমন স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে রক্তে এএসও টাইটার বৃদ্ধি পায়। অনেক সময় এটি বৃদ্ধি পেলেই বলা হয় বাতজ্বর হয়েছে। কিন্তু এএসও টাইটার একটি সহায়ক পরীক্ষামাত্র। অন্যান্য লক্ষণ না থাকলে এর বৃদ্ধিতে কিছু আসে-যায় না। বাতজ্বর ছাড়াও এএসও টাইটার বাড়তে পারে। যেমন: স্ট্রেপটোকক্কাসজনিত কিডনি রোগ, স্কারলেট জ্বর, নিউমোনিয়া, ইরাইসেপালাস এবং যেকোনো স্ট্রেপটোকক্কাস সংক্রমণ। তাই এএসও টাইটার বেশি পেলেই আতঙ্কিত হবেন না। বাতজ্বর আছে কি না, তা নিশ্চিত হয়ে তবেই চিকিৎসা শুরু করুন। কেননা, এ রোগের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি।

বাতজ্বর হলে কী ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে?

বাতজ্বরের ফলে কখনো কখনো দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা দেখা দিতে পারে যেমন:

বাতজ্বরের ফলে বাতজনিত হৃদ্‌রোগ হয়, যা থেকে হৃৎপিণ্ডের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। হৃৎপিণ্ডের ভালভের সমস্যা দেখা দেয়। বিভিন্ন জোড়া বা জয়েন্টে ব্যথা থাকে ও জয়েন্ট নষ্টও হয়ে যেতে পারে।

বাতজ্বর কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়

অস্বাস্থ্যকর ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশ বা বস্তি এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যেই এই রোগ বেশি হয়ে থাকে। তাই এমন পরিবেশ এড়িয়ে চলা উচিত। ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা যেমন খাবার পরে দাঁত-মুখ ভালো করে পরিষ্কার করা। বিশেষ করে রাতে শোয়ার আগে ও সকালে ঘুম থেকে উঠে ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করা। নিয়মিত পরিমিত পানি পান করা উচিত। গলায় সংক্রমণ বা গলাব্যথা হলে অবহেলা না করে তাৎক্ষণিক সঠিক চিকিৎসা করলে বাতজ্বর হওয়ার সম্ভাবনা কম হয় বা একেবারেই থাকে না। তাৎক্ষণিক চিকিৎসক না পেলে বা না দেখানো গেলে বাসায় হালকা গরম পানি ও লবণ দিয়ে কমপক্ষে দিনে তিনবার পাঁচ মিনিট সময় ধরে গরগর করা। তাহলে যেমন গলাব্যথা বা গলা সংক্রমণ ভালো হয়ে যাবে, তেমনি বাতজ্বর হওয়ার ঝুঁকিও থাকবে না।

বিশ্রাম ও বাড়তি সতর্কতা

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত বিভিন্ন ওষুধ খেতে হবে। পাশাপাশি ব্যথা এবং রোগের অন্যান্য উপসর্গ ভালো না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে প্রয়োজনে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর্যন্ত পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে।

বাতজ্বর হলে কি গর্ভধারণ করা যায়?

মেয়েদের বাতজ্বর হলে বিয়ে বা সন্তান ধারণে অসুবিধা নেই। গর্ভধারণ করলেও ওষুধ বা পেনিসিলিন চালিয়ে যেতে হবে। এতে সন্তানের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে বাতজ্বরজনিত হৃদ্‌রোগ গুরুতর হলে সন্তান নেওয়া মায়ের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই বাতজ্বরজনিত হৃদ্‌রোগীরা গর্ভধারণের আগে বাতজ্বরে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

উপসর্গ ভালো হলেই কি ওষুধ বন্ধ করা যাবে?

উপসর্গ ভালো হয়ে গেলে বাতজ্বরের প্রতিষেধক চিকিৎসা বন্ধ করা সঠিক নয়। বাতজ্বর একবার হলে বারবার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বাতজ্বরে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতে নিয়মিত ও ক্রমাগত ওষুধ ব্যবহার করতে হবে, যাতে পুনরায় বাতজ্বর না হয়। মনে রাখবেন, এই ওষুধ গ্রহণ বাতজ্বরের আগে আক্রমণের জন্য নয়। এটি ভবিষ্যতে বাতজ্বর না হওয়ার জন্য কাজ করে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ