নামাজ পড়ার সময় যদি ভুল হয়ে যায় এবং আমি
পরে বুঝতে পারি যে হয়তো ভুল হয়েছে সে ক্ষেত্রে
করণীয় কী.????
মনে করেন ৪ রাকাত নামায পড়তে যেয়ে
যে কোন রাকাতে সুরা পড়া হয়নি বা ভুল পড়েছি
এমন মনে হলে কী করনীয়
জানালে উপকৃত হবো.??????
নামাজে ভুল হয়েছে যদি এরকম সন্দেহ হয় তাহলে আপনাকে চিহ্নিত করতে হবে যে কি ভুল হয়েছে বলে সন্দেহ হচ্ছে। যদি মনে হয় ওয়াজিব ছুটে গেছে তাহলে সাহু সেজদাহ দিতে হবে। আর যদি মনে হয় ফরয ছুটে গেছে তাহলে নামাজ পূণরায় আদায় করতে হবে। এছাড়াও যদি ইচ্ছাকৃত কোনো ওয়াজিব ত্যাগ করা হয় তাহলে সাহু সেজদা দিলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। সেক্ষেত্রে আপনাকে নামাজ পূনরায় পরতে হবে।
নামাজের মধ্যে যেকোনো একটি ওয়াজিব অনিচ্ছাকৃত ভাবে ছুটে গেলে সাহু-সিজদা ওয়াজিব হয়ে যায়। যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে ওয়াজিব বা ফরজ ছুটে যায় তাহলে নামাজ পুনরায় পড়িতে হবে।
আপনার প্রশ্নে বলা হয়েছে, যে কোনো রাকাতে সূরা পড়া হয়নি বা ভূল পড়েছেন।
আপনাকে আগে জানতে হবে নামাজের ওয়াজিব গুলো কি কি।
যদি আপনার অনিচ্ছাকৃত ভূল গুলো ওয়াজিব তরকের এর মধ্যে পড়ে তাহলে সাহু-সিজদা করতে হবে।
আপনার সুবিধার্থে মন্তব্যে নামাজের ভিতর ওয়াজিব গুলো দেওয়া হল।
খুব ধীর স্থির ভাবে পড়ুন সাহু সিজদার মাসআলা পুরা জীন্দেগীর জন্য অতিবপ্রয়োজনীয়:
সাহু সিজদা সংবিধিবদ্ধ করার পিছনে রহস্য হল এই যে, এটা নামাযের মধ্যে যে ত্রুটি হয় তার পূর্ণতা দান করে।
তিনটি কারণে নামাযে সাহু সিজদা দিতে হয়ঃ
১) নামায বৃদ্ধি হওয়া। যেমন, কোন রুকূ বা সিজদা বা বসা ইত্যাদি বৃদ্ধি হওয়া।
২) হরাস হওয়া। কোন রুকন বা ওয়াজিব কম হওয়া।
৩) সন্দেহ হওয়া। কত রাকাত পড়েছে তিন না চার এব্যাপারে সংশয় হওয়া।
প্রথমতঃ ছালাতে বৃদ্ধি হওয়া:
মুছল্লী যদি নামাযের অন্তর্ভুক্ত এমন কিছু কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে বৃদ্ধি করে যেমনঃ দাঁড়ানো, বসা, রুকূ‘, সিজদা ইত্যাদি- যেমন দু‘বার করে রুকূ করা, তিন বার সিজদা করা, অথবা যোহর পাঁচ রাকাত আদায় করা। তবে তার ছালাত বাতিল বা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশের বিপরীত আমল করেছে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ “যে ব্যক্তি এমন আমল করবে, যার পক্ষে আমাদের নির্দেশনা নেই, তবে উহা প্রত্যাখ্যাত।”
কিন্তু যদি ভুলবশতঃ তা করে এবং ঐভাবেই ছালাত শেষ করে দেয়ার পর স্মরণ হয় যে, ছালাতে বৃদ্ধি হয়ে গেছে, তবে শুধুমাত্র সাহু সিজদা করবে। তার ছালাতও বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু ছালাতরত অবস্থায় যদি উক্ত বৃদ্ধি স্মরণ হয়- যেমন চার রাকাআত শেষ করে পাঁচ রাকাআতের জন্য দাঁড়িয়ে গেছে- তবে সে ফিরে আসবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে।
উদাহরণ: জনৈক ব্যক্তি যোহরের ছালাত পাঁচ রাকাআত আদায় করে নিয়েছে। কিন্তু শেষ তাশাহুদে বসার সময় এবৃদ্ধির কথা তার স্মরণ হল, তাহলে সে তাশাহুদ পূর্ণ করবে এবং সালাম ফেরাবে। তারপর সাহু সিজদা করবে এবং সালাম ফিরাবে। আর যদি সালাম ফেরানোর পর তা স্মরণ হয়, তবে সাহু সিজদা করবে এবং সালাম ফিরাবে।
আর যদি পঞ্চম রাকাআত চলা অবস্থায় স্মরণ হয় তবে তখনই বসে পড়বে এবং তাশাহুদ পড়ে সালাম ফেরাবে। তারপর সিজদায়ে সাহু করে আবার সালাম ফেরাবে।
দলীল:
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ صَلَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الظُّهْرَ خَمْسًا فَقَالُوا أَزِيدَ فِي الصَّلَاةِ؟ قَالَ: وَمَا ذَاكَ؟ قَالُوا: صَلَّيْتَ خَمْسًا، فسجد سجدتين بعد ما سلم. وفي رواية: فَثَنَى رِجْلَيْهِ وَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ ثم سلم
আবদুল্লাহ্ বিন মাসঊদ (রা:) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহরের নামায পাঁচ রাক্আত পড়লেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হল, নামায কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বললেন, কিভাবে? তাঁরা বললেন, আপনি আজ পাঁচ রাকাআত পড়েছেন। তখন তিনি দু‘টি সিজদা করলেন। অন্য রেওয়ায়াতে এসেছে, তখন তিনি পা গুটিয়ে ক্বিবলামুখি হলেন, দু‘টি সিজদা করলেন অত:পর সালাম ফেরালেন।
সালাত পূর্ণ হওয়ার আগেই সালাম ফেরানো:
নামায পূর্ণ হওয়ার আগেই সালাম ফেরানো ছালাতে বৃদ্ধি করার অন্তর্গত। কেননা ছালাতরত অবস্থায় সে সালামকে বৃদ্ধি করেছে। একাজ যদি ইচ্ছাকৃত করে তবে ছালাত বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি ভুলক্রমে হয়, কিন্তু অনেক পরে তার এ ভুলের কথা মনে পড়ল তবে নামায পুনরায় ফিরিয়ে পড়বে। আর যদি একটু পরেই (যেমন দু/এক মিনিট) তবে সে অবশিষ্ট ছালাত পূর্ণ করবে এবং সালাম ফিরাবে। অতঃপর সাহু সিজদা করে সালাম ফিরাবে।