প্রথমেই সালাম দিয়ে হবে, আসসালামু আলাইকুম (অন্যান্য ধর্মের হলে সে অনুযায়ী)। সংক্ষেপে নিজের পরিচয় দিতে হবে।তারপর উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে বলতে হবে, আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। শুরুতেই আমি আজকের এই অনুষ্ঠানে আমাকে বক্তৃতা দেবার সুযোগ করে দেবার জন্য সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তারপর অনুস্ঠানে বিষয়বস্তু সাপেক্ষে বক্তব্য প্রদান করতে হবে।বক্তব্য শেষে সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে ও সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে, আজকের মত এখানেই আমার বক্তব্য শেষ করছি।
দর্শক-শ্রোতাদের সম্পর্কে জানুন:
আপনি বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগের চেষ্টা করে আপনার অডিয়েন্সকে বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার শ্রোতাদের মধ্যে একেক মানসিকতার মানুষ থাকবে। তাঁদের সকলের সম্পর্কে ধারণা নিতে চেষ্টা করুন। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে আপনাকে এই কাজটি করতে হবে, তাই বিচক্ষণতার পরিচয় দিন। সফল হতে না পারলেও অন্তত চেষ্টা করুন। অডিয়েন্সকে আপন লোকজন ভাবুন। তাঁদের কীভাবে সম্বোধন করবেন সেটিও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধরুন, কোন হলরুমে মধ্যবয়স্ক অডিয়েন্স অথবা কলেজ স্টুডেন্টে পূর্ণ। এই দুই ধরণের নাগরিকের সামনে আপনার কথাবলার ধরণ, সম্বোধন অবশ্যই ভিন্ন হবে। আরো খেয়াল রাখুন আপনার বক্তব্য টিভিতে বা ইন্টারনেটে লাইভ দেখাচ্ছে কিনা? সেখানে আপনাকে কথা বলার ক্ষেত্রে আরো সতর্ক থাকতে হবে। এমন অবস্থায় প্রথম দুটি টিপস মেনে চলুন।
ব্যালান্স বজায় রাখতে (প্রিপারেশন নিন):
আপনি যখন কোন একটি বিষয়ে বক্তব্য রাখবেন তখন সেই বিষয়ে ভালো করে জেনে নিন। কোন বিষয়ে ভালো না জেনে কথা বলা উচিত নয়। জেনে রাখুন, আপনার অডিয়েন্সের মধ্যে এমন কেউ থাকতে পারে যিনি ওই বিষয়ে ভালো জ্ঞান রাখেন। তাই আপনার সাবধান হওয়া উচিত। আপনি যখন বক্তব্য দিচ্ছেন তখন আপনি আপনার বক্তব্যের মাঝে ডুবে থাকুন। একাগ্রচিত্তে আপনার বিষয়ের প্রতি মনোনিবেশ করুন।
বক্তৃতার বিষয় মনে রাখার সুবিধার জন্য কোন কাগজে/ব্যানারে লিখে রাখুন। যেমন, কোন আলোচনাসভা হলে ব্যানারে সভার বিষয়বস্তু, আয়োজকের নাম ইত্যাদি; কোম্পানির পণ্য/ব্র্যান্ড পরিচিতি অনুষ্ঠানে স্লাইডে কোম্পানির নাম, ওয়েবসাইট, পণ্যের মটো ইত্যাদি লিখে রাখতে পারেন।
কণ্ঠস্বর যেনো স্বাভাবিক থাকে:
গলাফাটা চিৎকারও নয়, আবার নিচুস্বরও নয়, এমন টোনে কথা বলুন। মনে রাখুন, সাহিত্যসভায় আপনার ভয়েস ন্যাচারাল থাকলেই চলবে, কিন্তু প্রতিবাদসভায় আপনার ভয়েস হতে হবে জোরালো। কন্ঠধ্বনি বা স্বরের উত্থান-পতন সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো হবে। মাঝে মাঝে খানিকক্ষণের থামুন। দম নিন। আবার বলতে শুরু করুন। আত্মবিশ্বাসী কন্ঠে কথা বলুন।
স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিন
আপনি বক্তৃতা দেওয়ার সময় শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন। ধীরে ধীরে শ্বাস নিন। ভালো হয় বক্তৃতা শুরু করার আগে কয়েকবার গভীরভাবে ৫/৭ সেকেন্ডব্যাপী শ্বাস (মুখ ব্যবহার করুন) নিয়ে নিন। তাতে পরবর্তী সময়টা শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবে।
কোন বক্তব্য দেওয়ার আগে প্রায় সবাই অস্থির বোধ করে। এই অস্থিরতা দূর করার জন্য বারবার অনুশীলন করতে হবে। তোমার নোটগুলো বারবার পড়ে দেখো যে সব ঠিক আছে কিনা। যখন তোমার মনে হবে যে তোমার বক্তব্য ঠিক হয়েছে, তখন বারবার অনুশীলন করতে থাকো। নিজের বক্তব্য ভিডিও করো অথবা কোন বন্ধুকে তোমার বক্তব্যের সমালোচনা করতে বলো।
তোমার বক্তব্য তৈরি করার আগে কাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছো, সে ব্যাপারে জেনে নাও। ফলে তুমি কোন ধরণের শব্দ বলবে, কী ধরণের তথ্য দেবে, বক্তব্যের ধরণ কেমন হবে, সে সম্বন্ধে একটা ভালো ধারণা পাবে।
নিজের বক্তব্যের জন্য কাঠামো দাঁড় করাও। বক্তব্যের ধাপগুলো লিখে রাখো। প্রথমেই বিষয়টির নাম লিখে রাখো, তারপর বিষয়টির কোন কোন দিক নিয়ে তুমি কথা বলতে চাও, তা লিখে ফেলো। তোমার শ্রোতার মনোযোগ বক্তব্যের প্রথম ৩০ সেকেন্ডেই আকর্ষণ করার দিকে জোর দাও।
কাগজ অথবা স্লাইড দেখে বক্তব্য দেওয়া দর্শকের সাথে তোমার সংযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। দর্শকের দিকে তাকিয়ে কথা বললে তোমার এবং তোমার বক্তব্যের দিকেই সবার নজর থাকবে। বক্তব্যের কাঠামো তোমাকে বিষয়বস্তু মনে রাখতে সাহায্য করতে পারে।
বক্তব্যে কী বলছো, তার সাথে সাথে কীভাবে বলছো, সেটাও সমান গুরুত্ব বহন করে। কথা বলার সময় গলার স্বর কখন ওঠাতে হবে এবং কখন নামাতে হবে, সে ব্যাপারে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। একইভাবে কথা বলে গেলে দর্শক বক্তব্য শোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এজন্য গলার স্বরে তারতম্য এনে দর্শকের আগ্রহ ধরে রাখতে হবে। এর ফলে তোমার আইডিয়াগুলো দর্শক খুব সহজেই বুঝতে পারবে।
দর্শকের দিকে নজর রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করো, প্রয়োজন হলে তোমার বক্তব্যে কিছু পরিবর্তন আনো। একদম গৎবাঁধা বক্তব্য দিলে তুমি সবচেয়ে আগ্রহী শ্রোতারও মনোযোগ পাবে না।
নিজের মত করেই সবসময় কথা বলবে, কখনোই একদম গাছের মত শক্ত হয়ে গিয়ে শুধু মুখ নাড়াবে না। তুমি যখন সাবলীলভাবে কথা বলবে, তখন শ্রোতারা তোমর কথা বিশ্বাস করবে। তখনই তোমার বক্তব্যের উদ্দেশ্য সফল হবে।
তোমার বক্তব্যের মধ্যে মজাদার কোন কৌতুক থাকলে দর্শক অবশ্যই আকৃষ্ট হবে। তাছাড়াও দর্শক কোন বক্তৃতার মাঝে গল্প শুনতেও পছন্দ করে। এজন্য বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন গল্প বলা যেতে পারে।
দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য গতানুগতিকভাবে বক্তব্য শুরু না করে কোন চমকপ্রদ তথ্য অথবা অসাধারণ উক্তি দিয়ে বক্তব্য শুরু করা যেতে পারে। বক্তব্য শেষ করার সময় পুরো বক্তব্যের সারমর্ম এবং শক্তিশালী বক্তব্য দিয়ে শেষ করতে হবে যা তোমার দর্শক অবশ্যই মনে রাখবে।
অডিও/ভিডিওর আধিক্য দর্শকের সাথে তোমার সম্পৃক্ততা কমিয়ে দেয়। এজন্য এগুলো যথাযথভাবে ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। এমনভাবে অডিও/ভিডিও তোমার বক্তব্যে ব্যবহার করতে হবে যেন তোমার বক্তব্য বাধাগ্রস্ত না হয়, বরং এগুলোর উপস্থিতিতে তোমার বক্তব্য আরও শাণিত হয়।
বক্তৃতায় সবসময়ই আরও ভালো করার জায়গা থাকবে। তোমার কাছ থেকে কেউ নির্ভুল বক্তৃতা আশা করে না। তবে তুমি যদি বক্তব্য তৈরি করার পেছনে যথেষ্ট সময় দাও, তাহলে ভালো বক্তৃতা দেওয়া তোমার জন্য সহজ হবে। তাই, আজ থেকেই সাবলীল বক্তা হওয়ার জন্য অনুশীলন শুরু করে দাও!
উপস্হিত বক্তৃতা শুরু করার নিয়ম নিম্নরূপঃ
★ কোনো কথা বলার সময় তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ— কী বলা হচ্ছে, কে বলছেন এবং কেমনভাবে বলছেন।
►উপস্থাপনার সাফল্য লুকিয়ে আছে শ্রোতার মনে আপনার সম্পর্কে ধারণা গঠনের ওপর। ►আকর্ষক বাচনভঙ্গি আয়ত্ত করুন যাতে শ্রোতা সহজেই আকৃষ্ট হন। রুিমে ঢোকার মুহূর্ত থেকে শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করুন।
►পরিচ্ছন্ন, স্মার্ট পোশাক পরুন, যাতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ►অতিরিক্ত গয়নাগাটি না পরা ভালো। ►পরিবেশনায় উৎসাহ বজায় রাখুন। ঘ্যানঘ্যানে, ঝিমানো বক্তৃতায় কেউ আগ্রহী হয় না। ►নিজের বিশ্বাস থেকে কথা বলুন, শ্রোতারা সানন্দে গ্রহণ করবেন। ►বক্তব্য শুরুর আগে সবকিছু ভালোভাবে নিরীক্ষণ করে নিন যেমন- দর্শক, বসার ব্যবস্থা, মাইক্রোফোন ইত্যাদি। ►আপনার বক্তব্যের হ্যান্ড নোট সঙ্গে রাখুন। প্রয়োজনের তুলনায় কয়েকটি বেশি রাখবেন। ►শুরু থেকে শেষ অবধি আগে থেকে ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে নিন। িশুরুটা খুব জরুরি। আত্মবিশ্বাস মূল মন্ত্র। ►একঘেয়ে ইন্ট্রোডাকশনে সময় নষ্ট করবেন না। সরাসরি মূল বক্তব্যে যেতে চেষ্টা করবেন। ►প্রথম দু’মিনিটের মধ্যে নজরকাড়া দু’একটি কথা অবশ্যই রাখবেন। ►কথোপকথনে আলোচনা সহজেই জনপ্রিয় হয়। শ্রোতাদের প্রশ্ন করুন, তাদের প্রতিক্রিয়ার উত্তর দিন, একটা সমঝোতা গড়ে তুলুন। একতরফা বকে যাবেন না। ►আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শ্রোতাদের সঙ্গে ভাগ করে নিন। গল্প বলুন, বিশেষ কোনো ঘটনার উল্লেখ করুন, দর্শক আগ্রহী হবে। ►ছোট ছোট বাক্য ব্যবহার করুন, কথার মাঝে প্রয়োজনে থামুন। মনে রাখবেন আপনি কিছুই মুখস্থ বলছেন না। ►জরুরি কোনো তথ্য জানানোর পর একটু থেমে পরবর্তী তথ্যে যান। বিশেষ্য এবং ক্রিয়াপদের ওপর জোর দিন। ►কথা বলতে গিয়ে যথাসময়ে যথাযথ বিরতি সফল উপস্থাপনার চাবিকাঠি।
►দর্শকের প্রয়োজন, চাহিদা, উদ্দেশ্য বোঝার চেষ্টা করুন। কখনই শ্রোতাদের বাড়িয়ে বা খাটো করে দেখবেন না।
►জোর করে মজা করার চেষ্টা করবেন না। হাসি, মজা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসতে দিন। ►থ্রিডাইমেশনাল চার্ট, কার্টুন ইত্যাদি ব্যবহার করুন। ►অজস্র সমীক্ষার রিপোর্ট, গাণিতিক চার্টে নিজের বক্তব্য ভারাক্রান্ত করবেন না।
►স্ক্রিনে কিছু দেখানোর সময় রিডিং পড়বেন না। শ্রোতাকে বুঝতে সময় দিন। ►নিজস্ব স্টাইল তৈরি করুন, অন্যকে অনুকরণ করবেন না। ►শ্রোতাদের প্রশ্নকে সাদরে গ্রহণ করুন। মনে রাখবেন প্রশ্ন মানে বক্তার সমালোচনা নয়, বরং বক্তব্যে উৎসাহের নিদর্শন। ►দুই রকম প্রশ্ন হতে পারে। জেনে নিন কখন কী উত্তর দেবেন : ভালো প্রশ্ন : ‘খুশি হয়েছি আপনার এই প্রশ্নের জন্য’। কঠিন প্রশ্ন : ‘এই মুহূর্তে বলতে পারছি না, আপনার কী মনে হয়?’ ►বক্তৃতার শেষের
দিকে বলার গতি কমান, গলার স্বর আস্তে করুন, স্পষ্ট ভাষায় শেষ করুন। ►হেসে ধন্যবাদ জানান। ►বক্তৃতার প্রতিটি মুহূর্ত তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করুন।