প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি কাকে বলে?
প্রোস্টেট গ্রন্থি পুরুষের মূত্রথলির সামান্য নিচে অবস্থিত সুপারির মতো এক টুকরো মাংশপিণ্ড যার মধ্যে দিয়ে মূত্রনালি গিয়েছে। এর প্রধান কাজ শুক্রাণুর খাদ্যের জোগান দেয়া।

প্রোস্টেটের বৃদ্ধি ৫০ বছরের বেশী বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে একটি স্বাভাবিক সমস্যা, যার কারণ বার্ধক্য।

এই অবস্থাকে বিনাইন প্রোস্টেটিক হাইপারপ্লাসিয়া (বিপিএইচ) ও বলে যতক্ষন না তা ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়। অথবা এটি প্রোস্টেট ক্যান্সার-এ পরিবর্তিত হয় বা এর সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধির প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
প্রোস্টেটের বৃদ্ধির ফলে পুরুষদের মূত্রত্যাগে সমস্যা দেখা দেয়, কার‍ণ মূত্রনালী সরু হয়ে যায়।

  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বিশেষত রাতে
  • ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব হওয়া
  • প্রস্রাব করার পরও প্রস্রাবের থলি খালি না হওয়া
  • প্রস্রাবের বেগ আটকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়
  • প্রস্রাবের গতি দুর্বল ও মাঝপথে বন্ধ হয়
  • প্রস্রাবের থলি বেশি ভরে ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব হয় ও অনেক সময় প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যায়
  • প্রস্রাব একেবারে আটকে যাওয়া বা আটকানোর মতো হয়। হঠাৎ করে প্রস্রাব আটকে গেলে তলপেটে তীব্র ব্যথা ও প্রচণ্ড প্রস্রাবের চাপ অনুভূত হয়।


প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলি কি কি?
প্রোস্টেটের বৃদ্ধি পাওয়ার আসল কারণগুলি জানা নেই, কিন্তু সেগুলি বার্ধক্যের সাথে সম্পর্কিত।

বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেহের হরমোনেও কিছু কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে। হরমোনের এই পরিবর্তনকেই প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধির কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রায় সব পুরুষের প্রোস্টেট বড় হতে থাকে কিন্তু সবার উপসর্গ দেখা দেয় না, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রোস্টেটও বাড়তে থাকে। এই বৃদ্ধির হার ৫০ বছরের উপরে বেশি তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রোস্টেট না বেড়ে ছোট হয়েও সমস্যা সৃষ্টি করে যাকে বলা ফাইব্রাস প্রোস্টেট।

গবেষনার মাধ্যমে জানা গেছে, যেসব পুরুষ অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে তাদের অন্ডকোষ বাদ দিয়েছেন, তাঁরা প্রোস্টেটের বৃদ্ধি পাওয়ার সমস্যায় পড়েননি।

৭৫ বছরের বেশি বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা খুবই বেশি আর তাদের ঝুঁকির অন্য কোনো আলাদা কারণ থাকে না।

কিভাবে প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?

  • রোগ নির্ণয় করা বেশ সহজ। চিকিৎসক মলদ্বারে আঙুল ঢুকিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন। এতে করে গ্রন্থিটির আকার এবং কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা জানা যায়।
  • মূত্রত্যাগের সমস্যা আরো কিছু কারণে যেমন, কিডনি খারাপ হওয়ার জন্যও হয়, ব্লাডার ক্যান্সার বা মূত্রনালীতে কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণেও হয়। এইসব কারণগুলির চিকিৎসা প্রথমে ডাক্তারকে করতে হবে।
  • ডাক্তার রোগীর উপসর্গগুলির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ চাইতে পারেন ও অবস্থা সম্বন্ধে ধারণা পাওয়ার জন্য অন্যান্য চিকিৎসাজনিত উপসর্গগুলি জানতে চাইতে পারেন।
  • শারীরিক পরীক্ষার মধ্যে, প্রোস্টেটের আল্ট্রাসনোগ্রাফি, প্রস্রাব এবং রক্ত পরীক্ষা করতে বলতে পারেন।
  • এছাড়াও রয়েছে প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন বা পিএসএ পরীক্ষা, পিভিআর ও ইউরোফ্লোমেট্রি ইত্যাদি।

এর চিকিৎসা উপসর্গগুলির প্রকটতার উপর নির্ভর করে। লঘু উপসর্গগুলিতে, কোনো চিকিৎসা দরকার হয় না।

প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধির চিকিৎসা:
প্রোস্টেটের বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে এর চিকিৎসা করাতে হবে। কারো কারো ঔষধের মাধ্যমেই চিকিৎসা সম্পন্ন করা যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।

  • শল্যচিকিৎসা : এর জন্য ট্রান্সইউরেথ্রাল রিসেকশন অব দ্য প্রস্টেট (টিইউআরপি) হলো সাধারণ শল্যচিকিৎসা। এ ক্ষেত্রে মূত্রপথ দিয়ে একটা যন্ত্র ঢুকিয়ে প্রস্টেটের সেই পয়েন্ট পর্যন্ত যাওয়া হয়, যেখানে প্রস্রাবের গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। তারপর অতিরিক্ত টিস্যু কেটে ফেলা হয়।
  • লেজার সার্জারি : প্রস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধির চিকিৎসায় লেজার সার্জারি অনেকটা টিইউআরপির মতোই। এ ক্ষেত্রে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে যন্ত্র ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয়।
  • ওপেন প্রস্টেটেকটমি : প্রস্টেট গ্রন্থি খুব বেশি বড় হলে ওপেন প্রস্টেটেকটমির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এ ক্ষেত্রে তলপেট কেটে অপারেশন করা হয় এবং প্রস্টেট গ্রন্থির অংশ বের করে আনা হয়। এই চিকিৎসায় সাধারণত প্রস্রাবের সমস্যার দ্রুত ও দীর্ঘস্থায়ী সুফল পাওয়া যায়।
  • ফিনাস্টেরাইড : এটি খাওয়ার একটি ওষুধ, যা প্রস্টেট গ্রন্থিকে সংকুচিত করে। ফলে প্রস্রাবের উপসর্গগুলোর উন্নতি ঘটে। অনেক সময় ওষুধ বন্ধ করলে আবার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে যৌনস্পৃহা কমে যায়।
  • আলফা ব্লকার : এ ছাড়া আলফা ব্লকার ওষুধগুলো প্রস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধিজনিত সমস্যায় ব্যবহার করা হয়। এসব ওষুধ প্রস্টেটের পেশিগুলোকে শিথিল করে সমস্যাগুলো কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। এর প্রতিক্রিয়ায় মাথা ব্যথা, ক্লান্তি অথবা রক্তচাপ কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ জন্য চিকিৎসা চলাকালে নিয়মিত চিকিৎকের পরামর্শ নিতে হবে।


প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি প্রতিরোধের উপায়:

  • রাতে ঘুমানোর ঠিক আগে পানি পান বন্ধ করতে হবে।
  • অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ এড়িয়ে যেতে হবে।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে