নিয়োগের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রথম দফায় ১৭ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োগের একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই প্রস্তাব সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, পুলিশ কনস্টেবল, সাব-ইন্সপেক্টর, সার্জেন্ট ও এএসপি পদে ১৭ হাজার সদস্য নিয়োগ করার প্রস্তাব মাস দেড়েক আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে সম্প্রতি সেই প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি অনুমোদন করলে সেখান থেকে সেটি পাঠানো হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। সেখানে চূড়ান্ত হওয়ার পরই নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হবে। জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রসচিব ড. মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক খান বলেন, ৫০ হাজার পুলিশ পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দেওয়া হবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই সংখ্যক পুলিশ নিয়োগ দিতে দুই থেকে তিন বছর লেগে যাবে। জানা গেছে, গত মাসের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পুলিশের উন্নয়নসংক্রান্ত বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার ও স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বৈঠকে পুলিশ সদস্য নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রতি ১০৩০ মানুষের বিপরীতে রয়েছেন একজন পুলিশ সদস্য। জাপানে প্রতি ২৫০ মানুষের বিপরীতে রয়েছেন একজন পুলিশ সদস্য। পাশের দেশ ভারতে রয়েছেন প্রতি ৭৩০ জনে একজন পুলিশ সদস্য। এসব বিবেচনা করে পুলিশি সেবা বাড়াতে বাহিনীতে আরো সদস্য নিয়োগের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩১তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে ৫০ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর পুলিশ নিয়োগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, পুলিশ সদর দপ্তরের পাঠানো প্রস্তাব অনুযায়ী পুলিশ নিয়োগ করা হবে। ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের টার্গেট দুই লাখ ১০ হাজার সদস্য করা। যদি সেই টার্গেট ফুলফিল করা যায়, তাহলে প্রতি ৭৬১ জনের জন্য দেশে একজন পুলিশ সদস্য পাওয়া যাবে। তাতে পুলিশি সেবা বাড়ানো যাবে। দুই লাখ ১০ হাজার করলেও সেটি ভারতের সমপর্যায়ের হবে না। আরেক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি থানায় এখন যে সংখ্যক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন, এর সঙ্গে নতুন ৫০ হাজার যোগ হলে থানাগুলোতে লোকবল বাড়বে। সঙ্গে গাড়িও বাড়বে। সাধারণ মানুষ আরো সেবা পাবে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য মতে, সারা দেশে পুলিশের সংখ্যা এক লাখ ৫৪ হাজার। মানুষকে অধিক সেবা দিতে শুধু রাজধানীতেই এক লাখ পুলিশ দরকার। বর্তমানে রাজধানীতে রয়েছে ২৬ হাজার ৫০০ জন। এই সাড়ে ২৬ হাজারের মধ্যে সাত হাজার সদস্য পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিওএম), আগে এর নাম ছিল দাঙ্গা দমন বিভাগ। বাকি সাড়ে ১৯ হাজার সদস্য আছেন ট্রাফিক ও থানায়। রাজধানীর প্রতিটি থানায় গড়ে ৮০ জনের মতো পুলিশ সদস্য রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন দেশে পুলিশ কিভাবে কাজ করে সে বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে জনসংখ্যার অনুপাতে পুলিশ বাড়িয়ে নানা ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।