আমি দীর্ঘ দুই মাস ধরে জন্ডিসে ভুগতেছি কমতেছে না। এবং মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে গেছি। সব কিছুতে ভয় লাগে অলওয়েজ অশান্তি ফ্যামিলির মানুষদের দেখলেও ভয় ফিল হয়, বাহিরে গেলেও একই অবস্থা ভয় লাগে নরমাল লাইফ কাটাইতে পারতেছিনা এখন কি করব কেউ সলিউশন দিবেন?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

জন্ডিস নিজে কোনো রোগ নয়, বরং এটি রোগের লক্ষণ। জন্ডিস হতে পারে নানা কারণে। জন্ডিস বলতে সাধারণত লিভারের প্রদাহজনিত জন্ডিসকেই বোঝানো হয়। ভাইরাস থেকে শুরু করে নানা ধরনের ওষুধ, অ্যালকোহল ইত্যাদি কারণে লিভারে প্রদাহ হতে পারে। আমাদের দেশে লিভার প্রদাহের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস ই, এ এবং বি ভাইরাস। এর মধ্যে প্রথম দুটি পানি ও খাদ্যবাহিত আর তৃতীয়টি ছড়ায় মূলত রক্তের মাধ্যমে। হেপাটাইটিস এ ভাইরাস প্রধানত শিশুদের জন্ডিসের কারণ, তবে যেকোনো বয়সের মানুষই হেপাটাইটিস ই ও বি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাঈদা রহিম বলেন, প্রস্রাবের রং, চোখ ও ত্বক হলদে দেখালে জন্ডিস হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়। অনেক কারণেই জন্ডিস হতে পারে। তাই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে জন্ডিসের কারণ, মাত্রা, জটিলতা ইত্যাদি জেনে নেওয়া উচিত। আর জন্ডিসের রোগীরা তাদের খাওয়া- দাওয়ার ব্যাপারে খুবই বিভ্রান্তিতে থাকে। কী খেতে হবে আর কী খাওয়া যাবে না, এই নিয়ে পরামর্শের যেন শেষ থাকে না। কারণ, জন্ডিস রোগীর পথ্যের ব্যাপারে প্রচলিত বিশ্বাস অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিক চিকিত্সাবিজ্ঞানের সঙ্গে খাপ খায় না। কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়? সব সময় বিশুদ্ধ খাদ্য ও পানি খেতে হবে। শরীরে রক্ত নেওয়ার দরকার হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং করে নিতে হবে। ডিসপোজিবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করাটাও খুবই জরুরি। বিশেষ করে হেপাটাইটিস বি-এর টিকা প্রত্যেকেরই নেওয়া উচিত। যাঁরা সেলুনে শেভ করেন, তাঁদের খেয়াল রাখতে হবে যেন আগে ব্যবহার করা ব্লেড বা ক্ষুর পুনরায় ব্যবহার করা না হয়। জন্ডিস হলে টিকা নিয়ে কোনো লাভ হয় না। তাই সুস্থ থাকতে আগেই টিকা নিতে হবে। হেপাটাইটিস বি-এর ক্ষেত্রে প্রথম মাসে একটি, দ্বিতীয় মাসে একটি বা ছয় মাসের মধ্যে একটি ডোজ দেওয়া হয়। হেপাটাইটিস এ- এর ক্ষেত্রে একটি ডোজই যথেষ্ট। আর দুই ক্ষেত্রেই পাঁচ বছর পর পর বুস্টার টিকা দেওয়া হয়। চিকিৎসা যেহেতু জন্ডিস কোনো রোগ নয়, তাই এর কোনো ওষুধ নেই। ৭ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে গেলে জন্ডিস এমনিতেই সেরে যায়। এই সময়ে পর্যাপ্ত বিশ্রামই চিকিৎসা। এ সময় ব্যথার ওষুধ যেমন: প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন, ঘুমের ওষুধসহ অন্য কোনো অপ্রয়োজনীয় ও কবিরাজি ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। এককথায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধই বাস্তবে সেবন করা ঠিক না। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার ঝুঁকিটাই বেশি থাকে। সাবধানতা রোগীকে বাইরের খাবার সব সময় পরিহার করতে হবে। বিশেষ করে খুব সাবধান থাকতে হবে পানির ক্ষেত্রে। জন্ডিস থাক বা না থাক, না ফুটিয়ে পানি পান করা যাবে না। বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে ফুচকা, চটপটি, বোরহানি আর সালাদের ব্যাপারে। কারণ, হেপাটাইটিস এ বা ই-এর মতো পানিবাহিত ভাইরাসগুলো এসবের মাধ্যমেই ছড়িয়ে থাকে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের খুব সাবধান থাকা উচিত। এ সময় মায়েরা প্রায়ই বাইরের খাবার খেয়ে থাকেন। আর গর্ভাবস্থায় শেষ তিন মাসে যদি হেপাটাইটিস ই হয়, তবে তা থেকে মা ও গর্ভের শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি। খাবার কেমন হবে? খাবারের ব্যাপারে তেমন কোনো বিধিনিষেধ নেই। তবে ভাইরাল হেপাটাইটিসে যকৃতের কার্যকারিতা কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়। তাই যকৃৎ ও পিত্তথলির ওপর অতিরিক্ত কাজের চাপ সৃষ্টি না হয় এমন কিছু খাবার এড়িয়ে চলাই উচিত। যেমন চর্বিজাতীয় খাবার (ঘি, মাখন, যেকোনো ভাজা খাবার বা ফাস্টফুড, গরু-খাসির মাংস ইত্যাদি)। জন্ডিসের রোগীদের ক্যালরির উৎস হিসেবে তাই সহজে হজমযোগ্য সরল শর্করা, যেমন: শরবত, ভাত, জাউভাত, সুজি, রুটি ইত্যাদি বেশি খাওয়া উচিত। বিশ্রাম কেমন হবে? পূর্ণ বিশ্রাম মানে এই সময়ে ভারী কোনো কাজ বা পরিশ্রমের কোনো কাজ না করা। কারণ, ভাইরাল হেপাটাইটিস লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলে পূর্ণ বিশ্রাম না নিলে বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের ফলে জন্ডিসের মাত্রা বেড়ে গিয়ে জটিল আকার ধারণ করতে পারে। কিছু ভ্রান্ত ধারণা অনেকে মনে করে, জন্ডিস হলে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। খেতে হবে বেশি করে আখের রস, ডাবের পানি, গ্লুকোজের শরবত ইত্যাদি। আসলে ব্যাপারটি এ রকম নয়। জন্ডিস রোগীকে সাধারণ মানুষের মতোই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে। সমস্যা হতে পারে স্বাভাবিকের চেয়ে কম পানি পান করলে। বেশি বেশি পানি খেলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয় বলে তা কিছুটা হালকা হয়ে এলেও রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ এতে বিন্দুমাত্র কমে না। বরং ঘন ঘন প্রস্রাব করার জন্য রোগীকে বারবার টয়লেটে যেতে হলে রোগীর বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটে। আখের রস আমাদের দেশে জন্ডিসের একটি বহুল প্রচলিত ওষুধ। রাস্তার পাশের যে দূষিত পানিতে আখ ভিজিয়ে রাখা হয় সেই পানি মিশ্রিত আখের রস খাওয়া থেকে হেপাটাইটিস এ বা ই ভাইরাস মানুষের শরীরে ছড়াতে পারে। আরেকটি প্রচলিত বিশ্বাস হচ্ছে জন্ডিসের রোগীকে হলুদ দিয়ে রান্না করা তরকারি খেতে দিলে নাকি জন্ডিস বাড়তে পারে। কথা হলো, রক্তে বিলিরুবিন নামক একটি হলুদ পিগমেন্টের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণেই জন্ডিস দেখা দেয়। এর সঙ্গে খাবারের হলুদের কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

Yes মনরোগ একটি মানসিক সমস্যা

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ