চুল পড়ে যাওয়ার কিছু কারণ
চুল পড়ে যাওয়ার বড় কারণগুলো হচ্ছে, বংশগত কারণে মাথায় টাক পড়া, হঠাৎ করে চুল পড়ে যাওয়া, আর সন্তান হবার পরবর্তী সময় অর্থাৎ হরমোনের কারণে চুল পড়ে যাওয়া৷ বংশগত কারণে টাক পড়লে তেমন কিছু করার থাকে না৷ তবে বাকি দুটো কারণে চুল পড়লে সময়মতো চিকিৎসা করালে চুল রক্ষা করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন কোলন শহরের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. উটে লিংকা।
চুল লাগানো
অনেক ছেলেদের ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যেই চুল পড়তে শুরু করে, তারপর এক সময় একেবারেই টাক পড়ে যায়৷ সাধারণত জেনেটিক বা বংশগত কারণেই অসময়ে চুল পাকে বা টাক পড়ে যায়৷ বংশগত কারণে যে কোনো কিছু হলে সে ক্ষেত্রে মেনে নেওয়া ছাড়া খুব বেশি কিছু করার থাকে না৷ তারপরও অনেকে মাথায় পরচুলা পরেন বা চুল লাগান৷
মেয়েদের চুল
মেয়েদের সরাসরি টাক না পড়লেও চুল পড়ার সমস্যা হয়, তবে তা অনেকটা দেরিতে৷ মেয়েদের সাধারণত ৫০ বছরের পরে চুল পড়তে শুরু করে৷ তবে মেয়েদের শরীরের হরমোনের তারতম্য হলে চুল বেশি পড়ে৷ মেয়েদের মাসিক ঋতুস্রাব, প্রসব এবং মেনোপজের কারণে বেশিরভাগ মেয়েদেরই চুল পড়তে পারে৷ তবে গর্ভবতী মেয়েদের অনেকের চুল পড়ে আবার কারো বা চুল আরো ঘন হয়ে থাকে৷ বিশেষজ্ঞের মতে, ‘এ নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই৷’
বিজ্ঞাপন
চুল পড়া বন্ধ হবে বা নতুন চুল গাজাবে – বাজারে এ ধরনের নানা আকর্ষণীয় ওষুধের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়৷ অনেকেই উপায়ান্তর না দেখে এসব বিজ্ঞাপনে প্রলোভিত হয়ে চুলে নানা রকম তেল বা ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন, যার ফল হয় উলটো৷ বিশেষজ্ঞের মতে, এসব দিকে না তাকিয়ে সরাসরি ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত৷
থাইরয়েড সমস্যা
শরীরে থাইরয়েডের মাত্রার তারতম্য হলে শুধু চুল পড়া নয় – নখ এবং ত্বকেও পরিবর্তন দেখা দেয়৷ তাছাড়া এই সমস্যায় অনেকে ক্লান্ত বোধও করেন৷ কাজেই নিজের মধ্যে এসব পরিবর্তন দেখলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ৷
আয়রন ও ক্যালসিয়ামের অভাব
শরীরে আয়রন এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলেও চুল পড়তে পারে৷ সাধারণত মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা বেশি হয়ে থাকে৷ তবে এসবই যে আসল কারণ তা নাও হতে পারে, ত্বকের ডাক্তারের কাছে সবকিছু পরীক্ষা করিয়ে খুঁজে বের করতে পারলেই কেবল সঠিক চিকিৎসা সম্ভব বলে জানান কোলনের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার উটে লিংকার৷
খাদ্যে পুষ্টিগুণের অভাব
খাদ্যে পুষ্টির অভাব এবং কড়া ডায়েটিং-এর ফলেও চুল পড়তে৷ তাই ভিটামিনযুক্ত খাবার এবং প্রচুর মাছ খাওয়া দরকার৷ বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ সুন্দর চুল ও ত্বকের জন্য খুবই উপকারী৷ তাছাড়া দুধ, ডিম, শাক-সবজি অবশ্যই খাবারের তালিকায় রাখতে হবে৷ আর যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করতে ভুলবেন না যেন !
ওষুধ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকেও চুল পড়তে পারে, তবে তা বেশিদিন থাকেনা৷ ওষুধ বন্ধ করে দিলেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নতুন চুল গজায়৷ ক্যানসার রোগীদের কেমোথেরাপি দেওয়ার পর পুরো মাথার চুল পড়ে গেলেও সেই জায়গায়ই কিছুদিন পরে আবার নতুন চুল ওঠে৷
সংক্রামক রোগ, স্ট্রেস, সঠিক যত্ন
বিভিন্ন সংক্রামক রোগের কারণেও চুল পড়তে পারে৷ আজকের যান্ত্রিক জীবনে স্ট্রেস থেকে মুক্ত, এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম৷ আজকের যুগে নারী-পুরুষ অনেকেই চুলে নানা ধরনের রং, শ্যাম্পু, ড্রায়ার, স্ট্রেটনার কত কী ব্যবহার করে থাকেন৷ অতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ, অতিরিক্ত গরম তাপ, গরম পানি চুলকে খুব সহজেই নষ্ট করে ফেলতে পারে৷ এসব দিকে কিছুটা লক্ষ্য রাখলে চুল পড়া কমতে পারে৷
জেনে নিন চুল পড়া কমানোর প্রাকৃতিক কিছু উপায়ঃ
গরম তেল মাসাজঃ ভিটামিন ই সমৃদ্ধ যে কোন তেল (নারকেল, অ্যালমন্ড, সরিষার তেল ইত্যাদি) হালকা গরম করে মাথায় মাসাজ করলে চুল পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
এই মাসাজের পূর্ণ উপকার পেতে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তেল দিয়ে মাথা মাসাজ করে শুয়ে পড়ুন। সকালে উঠে শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
পিঁয়াজের রসঃ পিঁয়াজে রয়েছে উচ্চ মানের সালফার, যা চুলের গ্রন্থিতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। এছাড়াও এটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান বহন করে, যা জীবাণু এবং পরজীবী ধ্বংস করে দেয়। কয়েকটি পিঁয়াজ পিষে বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে রস বের করে নিন। এই রস মাথার ত্বকে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন।
আলুর রসঃ আলুর মধ্যে থাকে ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, কপার এবং নায়াসিন যা চুলের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেলের অভাব পূরণ করে। ফলে চুলের শুষ্ক এবং ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া কমে আসে।
পরিষ্কার কিছু আলু পিষে এর রস সরাসরি স্ক্যাল্পে ব্যবহার করুন। ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা রেখে শুকিয়ে পর্যাপ্ত পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
[বিঃদ্রঃ এখানে আমরা আপনাকে কোনো প্রকার ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিতে পারি না]