ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ইসলামের প্রাথমিক যুগে কোন লোক মারা গেলে তার উত্তরাধিকারীগণ মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর পূর্ণ দাবীদার মনে করত। তারা ইচ্ছে করলে তাকে নিজেরাই বিবাহ করে নিত। ইচ্ছে করলে অন্যের সাথে বিবাহ দিয়ে দিত, আবার ইচ্ছে করলে বিয়েই দিত না। তারাই স্ত্রীলোকটির আত্মীয়-স্বজন থেকে বেশি হকদারের দাবী করত। তখন এ আয়াত নাযিল হয়।
হে ঈমানদারগণ! জোরপূর্বক নারীদের ওয়ারিশ হওয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয় আর তাদেরকে দেয়া মাল হতে কিছু উসূল করে নেয়ার উদ্দেশে তাদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করবে না, যদি না তারা সুস্পষ্ট ব্যভিচার করে।
তাদের সাথে দয়া ও সততার সঙ্গে জীবন যাপন কর, যদি তাদেরকে না-পছন্দ কর, তবে হতে পারে যে তোমরা যাকে না-পছন্দ করছ, বস্তুতঃ তারই মধ্যে আল্লাহ বহু কল্যাণ দিয়ে রেখেছেন।
তাফসীরঃ ইসলামপূর্ব যুগে পুরুষ নিজেকে স্ত্রীর জান ও মালের মালিক মনে করতো। স্ত্রী যার বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হতো, সে তার প্রাণকে নিজের মালিকানাধীন মনে করতো। স্বামীর মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশরা যেমন তার ত্যাজ্য সম্পত্তির ওয়ারিশ ও মালিক হতো, তেমনি তার স্ত্রীরও ওয়ারিশ ও মালিক বলে গণ্য হতো। ইচ্ছা করলে নিজেই তাকে বিয়ে করতো কিংবা অন্যের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করে তাকে বিয়ে দিয়ে দিতো। স্বামীর অন্য স্ত্রীর গর্ভজাত পুত্র নিজেও পিতার মৃত্যুর পর তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারতো। স্ত্রীর প্রাণেরই এই অবস্থা, তখন তার ধন-সম্পদের ব্যাপারটি তো বলাই বাহুল্য। যেসব অর্থ-সম্পদ স্ত্রী উত্তরাধিকারসূত্রে অথবা পিত্ৰালয় থেকে উপঢৌকন হিসেবে লাভ করতো, তারা সেগুলো হজম করে ফেলতো। যদি কোন নারী তার নিজের অংশের ধন-সম্পদের উপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেই নিত, তবে পুরুষরা তাকে অন্যত্র বিয়ে করতে বাধা দিত; যাতে সে এখানেই মারা যায় এবং ধন-সম্পদ তাদের অধিকারভুক্ত থেকে যায়। কোন কোন সময় স্ত্রীর কোন দোষ না থাকলেও তাকে তার প্রাপ্য প্রদান করতো না। আবার তালাক দিয়েও তাকে মুক্ত করত না। তালাক দিলেও অন্যত্র বিয়ে দিত না। যাতে তার মাহ্রের টাকা বাইরে না যায়। ইসলাম এসব কিছুর মূলোৎপাটন করে দিয়েছে। এ আয়াত সংক্রান্ত বেশ কিছু বর্ণনায় তা স্পষ্ট। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ইসলামপূর্ব যুগে কোন লোক মারা গেলে তার অভিভাবকরা তার স্ত্রীর অধিকারী হয়ে যেত। সে ইচ্ছে করলে তাকে বিয়ে করত অথবা অন্যের নিকট বিয়ে দিয়ে দিত।
অর্থাৎ তাদের সাথে উত্তম কথা বলবে। কথায়, কাজে, চলাফেরায় যতটুকু সম্ভব সৌন্দর্য রক্ষা করবে। যেমনটি তুমি তাদের কাছ থেকে আশা কর, তেমন ব্যবহারই করো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের মধ্যে উত্তম হলো ঐ ব্যক্তি যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে উত্তম। (তিরমিযীঃ ৩৮৯৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারিত্রিক সৌন্দর্যের মধ্যে এটা ছিল যে, তিনি সদাহাস্য সুন্দর ব্যবহার করতেন। পরিবারের সাথে হাস্যরস, নরম ব্যবহার ইত্যাদি করতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে কখনো কখনো দৌড় প্রতিযোগিতা করতেন। (আবু দাউদঃ ২৫৭৮, ইবন মাজাহঃ ১৯৭৯)
তারা যদি সুস্পষ্ট ব্যভিচার করে তাহলে
তাদেরকে বন্দি করে রেখ না। এটি ছিল স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর প্রতি অন্যতম আরো একটি জুলুম। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, যদি কোন লোকের অপছন্দনীয় স্ত্রী থাকত তাহলে তার সাথে স্বামী অশালীন আচরণ করত, জীবন যাপনে সংকীর্ণতা সৃষ্টি করত যাতে সে তার স্বামীর প্রদত্ত মাহরানা ফিরিয়ে দিয়ে চলে যায়। (ইবনে অত্র আয়াতের তাফসীর)
ইসলাম এরূপ আচরণ হারাম করেছে। কারো প্রয়োজন না থাকলে কিম্বা উভয়ের মাঝে সমন্নয় সম্ভব না হলে ভালভাবে তালাক দিয়ে দেবে।
ইবনে আব্বাস (রাঃ), হাসান বসরীসহ প্রমুখ মুফাসসীরগণ বলেন, প্রকাশ্য অশ্লীলতা হল ব্যভিচার। যদি স্ত্রী ব্যভিচার করে তাহলে স্বামীর বৈধতা রয়েছে সে তার প্রতি সংকীর্ণতা সৃষ্টি করে তার প্রদত্ত মাহর ফিরিয়ে নেবে। তারপর সে মহিলা খোলা তালাক দিয়ে চলে যাবে।
স্ত্রীদের কোন দিক দিয়ে ত্রুটি থাকলেও অন্যদিক দিয়ে তাদের মধ্যে অনেক কল্যাণ নিহিত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
কোন মুমিন পুরুষ মুমিন নারীকে যেন ঘৃণা না করে। তার কোন একটি দিক খারাপ লাগলেও অন্য কোন দিকে তাকে ভাল লাগবে। (সহীহ মুসলিম) তাই একজন স্বামীর উচিত সাধারণ ভুল-ত্রুটির জন্য স্ত্রীকে মারধর বা তালাক না দিয়ে বুঝানো, শিক্ষা দেয়া।