চুল পড়া একটি ভয়ঙ্কর সমস্যা। নারীপুরুষ উভয়েরই এই সমস্যা হয়ে থাকে। বিভিন্ন কারণে চুল পড়তে পারে। বংশগত, পরিবেশগত, দুশ্চিন্তা ও পুষ্টিহীনতাসহ নানা কারণে চুল পড়তে পারে। প্রথম দিকে চুল কম পড়লেও আস্তে আস্তে চুল পড়ার হার অনেক বেড়ে যায়। তাই শুরু দিকে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব হলে, চুল পড়া বন্ধ করা সম্ভব। ফিজিওলজিক্যাল এলোপেসিয়ায় সাধারণত প্রতিদিন গড়ে ৫০/১০০টি চুল পড়ে যায়। এই পড়ার তুলনায় গজানোর পরিমাণ যদি কমে যায় তখন মাথার চুল কমতে শূরু করে। তবে পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে এন্ড্রোজেনিক এলোপেসিয়ায় চুল পড়া সাধারণত বেশি দেখা যায়। ইহা সাধারণত মাথার নির্দিষ্ট কোনো একটি জায়গায় চুল পড়ে যায়। যেমন কপালের দুই সাইড থেকে অথবা মাথার মাঝখান থেকে যাহা সাধারণত এন্ড্রোজেনিক হরমোনের আধিক্যের কারণে হয়ে থাকে।
এলোপেসিয়া এরিয়াটায় যে কোনো স্থান থেকে গোলাকার অথবা ডিম্বাকারে চুল পড়ে থাকে। শুধু মাথার চুল নয় যেমন মুখের দাড়ি বুকের লোম পড়ে যেতে পারে। ফিমেল প্যাটার্ন এলোপেসিয়ায় পুরুষের মতো মেয়েদের পুরো মাথায় টাক দেখা যায় না। মেয়েদের ক্ষেত্রে সাধারণত মাথার সামনের দিকে, দুপাশে বা মাথার মাঝখানে চুল উঠে পাতলা হয়ে যায়।
চুল পড়ার কারণ
হরমোন: কিছু হরমোন আছে যা চুল পড়াকে ত্বরান্বিত করে। যেমন অ্যানড্রোজনিক, টেস্টোস্টেরন, অ্যান্ড্রোস্ট্রেনডিয়ন, ডিএইচটি হরমোনগুলো সাধারণত পুরুষের বেশি এবং মহিলাদের কম পরিমাণে থাকে। হেয়ার ফলিকলের ওপর সাধারণত এই হরমোনগুলো কাজ করে থাকে এবং চুল পড়া ত্বরান্বিত করে। এই কারণে পুরুষের চুল বেশি পড়ে।
বংশগত: চুল পড়ার অন্যতম একটি কারণ বংশগত। বংশে কারো টাক থাকলে আপনারও টাক হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে টাক হয় না, ৩০ থেকে ৪০ ভাগ চুল পড়ে যায়।
চর্মরোগ: একজিমা, সোরায়সিস, ডার্মাটাইটিস ইত্যাদি চর্মরোগের কারণে অথবা মাথায় খুশকির কারণে ও চুল পড়ে যেতে পারে। এছাড়া পুষ্টির অভাব বা রক্তস্বল্পতার কারণে চুল পড়ে যেতে পারে। মাথায় বিভিন্ন ধরনের ক্যামিক্যাল যেমন কলপ অথবা নিম্নমানের শ্যাম্পু ব্যবহারের ফলে। কিছু কিছু ড্রাগ যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, এন্টি ডিপ্রেসেন্ট, বিটা ব্লকার, কিছু এনএসআইডি, ইসিউনো সাপ্রেসিভ এজেন্ট, ভিটামিন এ জাতীয় ওষুধ বেশি খেলে।
চুল পড়ার চিকিৎসা দুই ধরনের হতে পারে। প্রথমত প্রাকৃতিক উপায়ে, দ্বিতীয়ত ওষুধের মাধ্যমে।
প্রাকৃতিক চিকিৎসা
প্রোটিন: চুল পড়া বন্ধের অন্যতম একটি উপাদান হলো প্রোটিন, কেন না চুল গঠনের অন্যতম উপাদান হলো কেরাটিন যা অ্যামাইনো এসিড দিয়ে তৈরি এক ধরনের প্রোটিন। এই অ্যামাইনো এসিড নতুন চুল গজানোর জন্য সহায়তা করে। মাছ, মাংস,পনির, দুধ, ডিম, সয়াবিন, মটরশুটি, কলা, বাদাম ইত্যাদি খাবারে প্রচুর অ্যামাইনো এসিড পাওয়া যায়।
পানি: শরীরের পানির ঘাটতি হলে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে। তাই প্রতিদিন বেশি বেশি পানি পান করার অভ্যাস করুন চুল পড়া কমে যাবে।
আদা রসুন ও পেয়াজের রস: এই তিনটি উপাদানের যে কোনো একটি আপনি চুলের গোড়ায় নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল পরা কমাতে পারেন।
নিমপাতা: তাজা নিমপাতা বেটে তাতে সামান্য অ্যাপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে মাথায় লাগান। কিছুক্ষণ পর হালকা কোনো শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আপনি প্রতি সপ্তাহে এক বা দুই বার এই থেরাপি অনুসরণ করলে চুল পড়া কমে যায়।
গ্রিন টি: গ্রিন টির দুইটি টি ব্যাগ এক কাপ পরিমাণ পানিতে ফুটিয়ে ফুটন্ত পানি ঠাণ্ডা করুন। এরপর এই ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া পানি টুকু আপনার চুলের গোড়াসহ সাড়া চুলে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। এবং কিছুক্ষণ পরে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এই পদ্ধতি নিতে পারেন।
কালোজিরা: মাথার নতুন চুল গজাতে কালোজিরা একটি অন্যতম উপাদান। নিয়মিত কালোজিরার তৈল চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে লাগান অথবা নিয়মিত কালোজিরা খেলেও উপকার পাবেন।
মেথি: ১ টেবিল চামচ মেথি সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে উটে বেটে তা মাথায় লাগান। হালকা ম্যাসাজ করে ৩০ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলুন দেখবেন চুল পড়া কমে আসছে।
তাছাড়া হোমিওপ্যাথিতে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
সাধারণ ব্যবস্থাপনা
নিয়মিত প্রতিদিন ভিটামিন এ ও সি যুক্ত শাকসব্জি খেতে হবে। প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে হবে। যেমন-শিমের বিচি মটরশুটি, বরবটি মুরগি ডিম। নিয়মিত পুরুষ দের জন্য ১৮ গ্লাস পানি এবং মেয়েদের জন্য ১২ গ্লাস পানি খেতে হবে। নিয়মিত মাথায় শ্যাম্পু করা এক্ষেত্রে ১ দিন পরপর শ্যাম্পু করাটাই উত্তম। চুলে কালার কলপ ও হিট দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।