শয়তান আল্লাহ তায়ালার কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন যে, আমি তাদেরকে অবশ্যই পথভ্রষ্ট করবো। এবং তাদের মধ্যে আমি দুনিয়াবি কামনা বাসনা বাড়িয়ে দেবো
সে বলল, হে আমার রব! আপনি যে আমাকে বিপথগামী করলেন সে জন্য অবশ্যই আমি জমীনে মানুষের কাছে পাপ কাজকে শোভন করে তুলব এবং অবশ্যই আমি তাদের সবাইকে বিপথ গামী করব। (আল হিজরঃ ৩৯)
অর্থাৎ যেভাবে আপনি এ নগণ্য ও হীন সৃষ্টিকে সিজদা করার হুকুম দিয়ে আমাকে আপনার হুকুম অমান্য করতে বাধ্য করেছেন। ঠিক তেমনিভাবে এ মানুষদের জন্য আমি দুনিয়াকে এমন চিত্তাকর্ষক ও মনোমুগ্ধকর জিনিসে পরিণত করে দেবো যার ফলে তারা সবাই এর দ্বারা প্রতারিত হয়ে আপনার নাফরমানী করতে থাকবে, আখেরাতের জবাবদিহির কথা ভুলে যাবে। অথবা আয়াতের অর্থ, নাফরমানিকে তাদের কাছে এমন চিত্তাকর্ষক করে তুলব যে, তারা আপনার নির্দেশ ভুলে যাবে।
শয়তান সব মানুষের ওপর কর্তৃত্ব ও আধিপত্য চালাতে পারে না। যারা আল্লাহর পথে অবিচল থাকে, শয়তান তাদের ওপর কর্তৃত্ব চালাতে পারে না। মানুষ নিষ্পাপ হয়ে জন্মগ্রহণ করে। ধীরে ধীরে সে অপরাধী হয়ে ওঠে। ক্রমাগত সে পাপের পথে পা বাড়ায়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ বলেন, আমি আমার বান্দাদের হানিফ অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ রূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর শয়তান তার পিছে লেগে তাকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে নিয়ে যায়।
তবে শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য মহানবী (সাঃ) বিভিন্ন কৌশল শিখিয়ে দিয়েছেন। মানুষ যখন আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল হয় তখন শয়তান তাদের বন্ধু হয়। তাই ইসলাম মুসলিম জাতিকে সংঘবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
শয়তানের প্রতারণা ও বিভ্রান্তি থেকে আত্মরক্ষার সবচেয়ে কার্যকর ও মোক্ষম হাতিয়ার হলো, ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ও যথার্থ জ্ঞানার্জন করা। কোরআন ও সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান রাখেন—এমন লোকদের শয়তান ভয় পায়। শয়তান খুব কমই তাঁদের প্রতারিত করতে পারে।
[আপনি শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচতে নিয়মিত "তাবুজ" পাঠ করুন]
শয়তানের প্ররোচনা বিষয়ে কুরআন-হাদিসের বক্তব্য >> আল্লাহ বলেন, ‘যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি শ্রবণকারী মহাজ্ঞানী। (সূরা আ’রাফ : আয়াত ২০০) সুতরাং শয়তানের প্ররোচনা থেকে আত্মরাক্ষার জন্য পড়তে হবে- উচ্চারণ- আঊ’জুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বা নির রাঝিম। অর্থ- আমি বিতাড়িত শয়তানে হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (আবু দাউদ) >> রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের ঘরসমূহ কবরে পরিণত করবে না। নিশ্চয় শয়তান ঐ ঘর থেকে পলায়ন করে যেখানে সূরা বাকারাহ্ পাঠ করা হয়। সুতরাং যাদের সম্ভব সূরা বাক্বারা পাঠ করবে। >> নামাজের মধ্যে শয়তান কুমন্ত্রণা দিলে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে (আঊজুবিল্লাহ পড়ে) বাম দিকে তিন বার থুথু ফেলতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালাম ইরশাদ করেন। (মুসলিম, মিশকাত) >> কুরআন তিলাওয়াতের সময়ও শয়তানের প্ররোচনা থেকে আশ্রয়ের নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। আল্লাহ বলেন, যখন তুমি কুরআন পাঠ করবে, তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর আশ্রয় চাইবে। (সূরা নহল : আয়াত ৯৮) কারণ কুরআন তিলওয়াতের সময় যেন কোনো মুমিন বান্দার মন-মগজ বিগড়িয়ে না যায়। >> যখন মনে শয়তানি কার্যক্রম প্রকট আকার ধারণ করবে। মনকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে হেফাজতের জন্য আযান দিবে। বুখারি ও মুসলিম শরীফের এ কথার সমর্থন রয়েছে। মুমিন বান্দার করণীয়..... শয়তান থেকে মাহফুজ থাকতে চায় তামাম মুসলিম মিল্লাত। শয়তানকে প্রতিটি কাজ থেকে বিতাড়িত করতে হলে মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। উপরোল্লিখিত কাজগুলোর পাশাপাশি এই কাজগুলোও যথাযথভাবে করতে হবে- >> সকাল-বিকাল জিকির আজকার করা >> ঘুমের আগে ও পরে ঘুমের দোয়া পড়া >> ঘরে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার দোয়া পড়া >> খাবার খাওয়ার আগে ও পরের দোয়া >> মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়াসহ প্রত্যেক কাজের শুরুতে যে সব দোয়ার বিধান রয়েছে, সেগুলো পড়া। >> ইসলামি শরিয়াত কর্তৃক জিকির আজকারসমূহ পড়া। সর্বোপরি... উপরোল্লিখিত দোয়া আমল করতে যারা অপারগ তাদের জন্য শুধুমাত্র ‘আঊজুবিল্লাহ’ই যথেষ্ট। আশা করা যায় উপরোক্ত তাসবিহ, জিকির ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মুমিনবান্দাকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে হেফাজত করবেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম মিল্লাতকে শয়তান থেকে মাহফুজ রাখুন। আমিন।