শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

 আপনার এ বিষয়টি আগে বুঝতে হবে : ১-"মাযহাব কি?" ২- "মাযহাব মানাকে ওয়াজিব বা ফরজ বলা হয় কেন?"  ৩-"মাযহাব মানা কার উপর ফরজ বা ওয়াজিব?"  ১-মুজতাহিদ  কুরআন সুন্নাহ, সাহাবাদের ফাতওয়া, কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের ঐক্যমত্ব এবং যুক্তির নিরিখে কুরআন সুন্নাহ থেকে  মাসআলা বের করেন এবং নিষ্ঠার সাথে বিভিন্ন মূলনীতি নির্ধারণ করে কুরআন সুন্নাহর বাহ্যিক বিপরীতমুখী মাসআলার মাঝে সামাঞ্জস্যতা আনেন। সুন্নাহর একাধিক অর্থবোধক শব্দের নির্ধারিত পালনীয় অর্থকে নির্ধারিত করেন  এবং নতুন উদ্ভূত মাসআলার শরয়ী মূলনীতির আলোকে সমাধান বের করেন। সেই সাথে নতুন নতুন মাসআলার কোন মূলনীতির আলোকে হুকুম আরোপিত হবে যার বিধান সরাসরি কুরআন সুন্নাহে বর্ণিত নেই, সেই মূলনীতিও নির্ধারিণ করেন আর তাদের উদ্ভাবিত মূলনীতির আলোকে বের হওয়া এই মাসআলার নাম মাযহাব। ২-মাযহাব পালন এই জন্য আবশ্যক যে, কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে ভাল জানে এমন আলেম নগণ্য। যারাও আছে তারা কুরআনে কারীমের কোন আয়াতের হুকুম রহিত হয়ে গেছে, কোন আয়াতের হুকুম বহাল আছে, কোন আয়াত কোন প্রেক্ষিতে নাজিল হয়েছে, কোন আয়াত কাদের উদ্দেশ্য করে নাজিল হয়েছে। কোন আয়াতাংশের প্রকৃত অর্থ কি? আরবী ব্যাকরণের কোন নীতিতে পড়েছে এই বাক্যটি? এই আয়াত বা হাদীসে কী কী অলংকারশাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে? ইত্যাদী সম্পর্কে বিজ্ঞ হন না। সেই সাথে কোনটি সহীহ হাদীস কোনটি দুর্বল হাদীস? কোন হাদীস কি কারণে দুর্বল? কোন হাদীস কী কারণে শক্তিশালী? হাদীসের বর্ণনাকারীদের জীবনী একদম নখদর্পনে থাকা আলেম এখন নেই। অথচ হাদীস শক্তিশালী না হলে তার দ্বারা শরয়ী হুকুম প্রমাণিত হয় না। এই সকল বিষয়ে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি পাওয়া দুস্কর। একে তো অধিকাংশ মানুষই আলেম না। আর মুষ্টিমেয় যারা আলেম তারাও উল্লেখিত সকল বিষয় সম্পর্কে প্রাজ্ঞ না। তাই আমাদের পক্ষে কুরআন সুন্নাহ থেকে সঠিক মাসআলা বের করা অসম্ভব। একটি উদাহরণ এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-আকিমুস সালাত তথা সালাত কায়েম কর। আরেক আয়াতে বলেছেন- ইন্নাল্লহা ওয়া মালাইকাতুহু ইছল্লুুুু না আলান নাবিয়্যি তথা নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা এবং ফেরেস্তারা নবীজীর উপর সালাত পড়ে। এই আয়াতের শেষাংশে এসেছে- ইয়া আইয়ুহাল্লাযিনা আমানু ছল্লু  আলাইহি ওয়া সাল্লিমু তাসলিমা তথা হে মুমিনরা তোমরাও তাঁর উপর সালাত পড় এবং তাঁকে সালাম জানাও। {সূরা আহযাব-৫৬} এই সকল স্থানে লক্ষ্য করুন-“সালাত” শব্দটির দিকে। তিনটি স্থানে সালাত এসেছে। এই তিন স্থানের সালাত শব্দের ৪টি অর্থ। প্রথম অংশে সালাত দ্বারা উদ্দেশ্য হল “নামায” অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা আমাদের নির্দেশ দিলেন যে, তোমরা নামায কায়েম কর। {সূরা বাকারা-৪৩} আর দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ও তার ফেরেস্তারা নবীজী সাঃ এর উপর সালাত পড়েন মানে হল-আল্লাহ তায়ালা নবীজী সাঃ এর উপর রহমত পাঠান, আর ফেরেস্তারা নবীজী সাঃ এর জন্য মাগফিরাতের দুআ করেন। আর তৃতীয় আয়াতাংশে “সালাত” দ্বারা উদ্দেশ্য হল উম্মতরা যেন নবীজী সাঃ এর উপর দরূদ পাঠ করেন।  একজন সাধারণ পাঠক বা সাধারণ আলেম এই পার্থক্যের কথা কিভাবে জানবে? সেতো নামাযের স্থানে বলবে রহমাতের কথা, রহমতের স্থানে বলবে দরূদের কথা, দরূদের স্থানে বলবে নামাযের কথা। এরকম করলে দ্বীন আর দ্বীন থাকবে না, হবে জগাখিচুরী। এরকম অসখ্যা স্থান আছে, যার অর্থ উদ্ধার করা কঠিন। তাই একজন বিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ ব্যক্তির শরাপন্ন হয়ে তার গবেষনা অনুযায়ী উক্ত বিষয়ের সমাধান নেয়াটাই হল যৌক্তিক। এই নির্দেশনাই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে দিয়েছেন- ফাসআলু আহলায যিকরি ইন কুুুুনতুম লা তাঅলামুন .নাহল-৪৩ তথা তোমরা না জানলে বিজ্ঞদের কাছে জিজ্ঞেস করে নাও। {সূরা নাহল-৪৩} বিজ্ঞ ফুক্বাহায়ে কিরাম কুরআন সুন্নাহ, ইজমায়ে উম্মাত, এবং যুক্তির নিরিখে সকল সমস্যার সমাধান বের করেছেন। সেই সকল বিজ্ঞদের অনুসরণ করার নামই হল মাযহাব অনুসরণ।  রাসূল সাঃ যখন মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ কে ইয়ামানে পাঠাতে মনস্থ করলেন তখন মুয়াজ রাঃ কে জিজ্ঞেস করলেন-“যখন তোমার কাছে বিচারের ভার ন্যস্ত হবে তখন তুমি কিভাবে ফায়সালা করবে?” তখন তিনি বললেন-“আমি ফায়সালা করব কিতাবুল্লাহ দ্বারা”। রাসূল সাঃ বললেন-“যদি কিতাবুল্লাহ এ না পাও?” তিনি বললেন-“তাহলে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাত দ্বারা ফায়সালা করব”। রাসূল সাঃ বললেন-“যদি রাসূলুল্লাহ এর সুন্নাতে না পাও?” তখন তিনি বললেন-“তাহলে আমি ইজতিহাদ তথা উদ্ভাবন করার চেষ্টা করব”। তখন রাসূল সাঃ তাঁর বুকে চাপড় মেরে বললেন-“যাবতীয় প্রশংসা ঐ আল্লাহর যিনি তাঁর রাসূলের প্রতিনিধিকে সেই তৌফিক দিয়েছেন যে ব্যাপারে তাঁর রাসূল সন্তুষ্ট”। {সূনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৫৯৪, সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-১৩২৭, সুনানে দারেমী, হাদিস নং-১৬৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২০৬১} এই হাদীসে লক্ষ্য করুন-রাসূল সাঃ এর জীবদ্দশায় হযরত মুয়াজ রাঃ বলছেন যে, আমি কুরআন সুন্নাহ এ না পেলে নিজ থেকে ইজতিহাদ করব, আল্লাহর নবী বললেন-“আল হামদুলিল্লাহ”। আর ইয়ামেনের লোকদের উপর হযরত মুয়াজের মত তথা মাযহাব অনুসরণ যে আবশ্যক এটাও কিন্তু হাদীস দ্বারা স্পষ্ট। ৩-আর যারা নিজেে  ইজতিহাদ করতে পারে অর্থাৎ ইজতিহাদের যোগ্যতা যাদের রয়েছে তাদের কারো অনুসরণ করা অর্থাৎ মাজহাব মানা আবশ্যক নয়,তাই ইমামগণের উপরও মাজহাব মানা ফরজ ছিল না আর তাই  তারা সরাসরি কুরআন হাদিস থেকেেই আমল করেছেন।যেমন:  ইমাম বুখারী মুজতাহিদ ছিলেন, তাই তার কারো অনুসরণের দরকার হয় নি।   যদি আমরা মাযহাব না মানি তাহলে শুধু নামাজের সমস্ত মাসআলা ইজতিহাদ  করে কুরআন হাদিস থেকে বের করতে গেলে বছরখানেক পেরিয়ে যাবে, অবশেষে দেখা যাবে আমরা যা বের করব তা ইমামদের মাসআলার সাথেই মিলেে যাচ্ছে অথবা ইমামগণ আরো উৎকৃষ্টভাবে তা বর্ণনা করে গেছেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত  জানতে দেখুন ১-তাযাল্লিয়াতে সফদর, মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর প্রণীত। ২-মাযহাব মানি কেন? মুফতী রফিকুল ইসলাম আল মাদানী প্রণীত ৩-মাযহাব কি ও কেন? মুফতী তাকী উসমানী কৃত।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ