শৈশব পার হয়ে কৈশোর, এরপর যুবক। এরই মাঝখানে একটা সময়কে বলা হয় বয়ঃসন্ধিকাল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১০ থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত বয়সটি হচ্ছে বয়ঃসন্ধিকাল। এই সময়েই একটি ছেলে বা মেয়ের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ মানসিক, শারীরিক ও আচরণগত পরিবর্তন ঘটে। একদিকে তারা বড় হতে থাকে, আবার শৈশবকেও পুরোপুরি ছেড়ে আসতে পারে না। তাদের মধ্যে এ সময় কিছুটা মানসিক টানাপোড়েন দেখা দিতে পারে। ছেলেদের ক্ষেত্রে এসময় তারা নিজেকে স্বাধীন ভাবতে শুরু করে, বাবা-মায়ের খবরদারি একেবারেই পছন্দ করে না, নিজে নিজে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে চায় এবং কখনো বাবা-মায়ের সঙ্গে রূঢ় আচরণও করে ফেলে। বাবা-মায়েরা এই বয়সের ছেলেকে কখনো বলেন ‘বড়’, আবার কখনো বলেন ‘ছোট’। এক্ষেত্রে ছোটদের সঙ্গেও সে মিশতে পারে না, আবার বড়দের আসরেও সে সাদরে গৃহীত হয় না। নারী-পুরুষের শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে অনেক কিছু সে এ বয়সে জানতে পারে এবং যদি শৈশবের ধারণার সঙ্গে তা না মিলে তখন মনের মধ্যে জন্ম নেয় দ্বন্দ্ব। নিজের শারীরিক পরিবর্তনও তাকে কিছুটা অন্তর্মুখী করে তোলে। তার ভেতর তৈরি হয় বয়ঃসন্ধিকালের সংকট বা অ্যাডোলেসেন্ট ক্রাইসিস। এই সংকট মোকাবিলায় বাবা-মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকালের এই সংকটে বাবা-মায়ের কিছু দায়িত্ব পালন করা উচিত। যা যা করা উচিত : বুঝতে হবে সন্তানের ভাষা: ১৫ বছরের ছেলেটি কী চাইছে তা বাবা-মায়ের বুঝে নিতে হবে। বেশির ভাগ সময় সে মুখ ফুটে তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রকাশ করে না। আচার-আচরণ, দেহভঙ্গি ও প্রতিক্রিয়া দেখে চাওয়া বা না-চাওয়া আঁচ করে নিতে হবে। দিতে হবে গুণগত সময়: কেবল কাজের কথা নয় বরং দৈনন্দিন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে প্রতিদিন কিছুটা সময় কথা বলতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে এই কথোপকথন যেন উপদেশে পর্যবসিত না হয়। আবেগকে গুরুত্ব দিন: আপনার কাছে গুরুত্বহীন এমন ছোট একটি বিষয় নিয়ে সে উচ্ছ্বসিত হতে পারে। তাকে নিরুৎসাহিত করবেন না। তার আবেগ ও উচ্ছ্বাসকে মূল্য দিন। কোনো কারণে তার মন খারাপ হলে অযথা ‘কী হয়েছে, কী হয়েছে...’ বলে তাকে ব্যস্ত করে না তুলে আবেগ প্রকাশের সুযোগ দিন। কোনো মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হলে রাগারাগি না করে বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করুন। গোপন নজরদারি এড়িয়ে চলুন: ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন। তার ওপর গোপন নজরদারি করবেন না। তার অনুপস্থিতিতে তার মুঠোফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার বা ডায়েরি ঘাঁটাঘাঁটি করবেন না। তবে এ বয়সে সে মাদক গ্রহণসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে যেতে পারে। এই বিষয়গুলো নিয়ে তার সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করুন। যৌক্তিক চাহিদার মূল্য দিন: সন্তানের চাওয়া-পাওয়ার মূল্য দিন, তবে সেটি হতে হবে যৌক্তিক। আপনার আর্থিক ও সামাজিক সংগতিকে অতিক্রম করতে পারে, এমন চাহিদা মেটাতে গেলে তার প্রভাব পরবর্তী সময়ে মোটেই ভালো হবে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ দিন: পারিবারিক বিষয় থেকে শুরু করে ছোটখাটো কেনাকাটায় তার পছন্দের মূল্য দিন ও তাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করে দিন। বন্ধুদের গুরুত্ব দিন: তার বন্ধুদের গুরুত্ব দিন, কোনো অসৎ বন্ধু থাকলে বিষয়টি তাকে বুঝিয়ে বলুন। ছেলের বন্ধুদের প্রতিপক্ষ হবেন না। তবে সে কী করছে, কোথায় যাচ্ছে, কাদের সঙ্গে চলছে তা জানুন, মাঝে মাঝে তার বন্ধুদের বাসায় দাওয়াত দিন। এছাড়া তাকে একটি রুটিন তৈরি করে চলতে উৎসাহিত করুন। মন দিয়ে সন্তানের কথা শুনুন, হাজারো ব্যস্ততার মধ্যেও তাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিন। তার অনুভূতিগুলোকে বুঝুন এবং সে অনুযায়ী আপনার আচরণ পরিবর্তন করুন। সন্তানের যেকোনো বিষয়ে বাবা-মা একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নিন। মতানৈক্য থাকলেও সন্তানের স্বার্থে তা এড়িয়ে চলুন। সবকিছুর পরও যদি মনে হয় সন্তানকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, তার আচরণ হয়ে উঠছে অস্বাভাবিক, তবে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তথ্যসূত্র : সুপারমমবিডি